রাজবাড়ীতে ছাত্র আন্দোলনে হামলার মামলায় আ. লীগের ৪ নেতার জামিন
রাজবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আওয়ামী লীগের চার নেতা সম্প্রতি জামিন লাভ করেছেন। ২৪ মার্চ, ২০২৫ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই চার নেতা গত বছরের আগস্টে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তবে, আদালতের সাম্প্রতিক রায়ে তাদের জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে, যা রাজনৈতিক ও স্থানীয় মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই নেতারা হলেন—রাজবাড়ী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সানাউল্লাহ, বাণীবহ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রফিক উদ্দিন মিয়া, রামকান্তপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন এবং গোয়ালন্দ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ইউনুস মোল্লা।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এই হামলার অভিযোগে তিনটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়, যার মধ্যে দুটি রাজবাড়ী সদর থানায় এবং একটি গোয়ালারন্দ ঘাট থানায়। মামলাগুলোতে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের শতাধিক নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাতনামা ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়। গত ডিসেম্বরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এই চার নেতাকে গ্রেপ্তার করে এবং আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। তবে, সম্প্রতি তারা আদালতে জামিনের আবেদন করলে জেলা ও দায়রা জজ আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করে।
রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুর রহমান গত ডিসেম্বরে জানিয়েছিলেন, “গোয়ালন্দ মোড় ও টিএনটি পাড়া এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এই নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।” তিনি আরও বলেন, “মামলাগুলোতে প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তবে আদালতের বিবেচনায় জামিন দেওয়া হয়েছে।” গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলামও নিশ্চিত করেছেন যে, গোয়ালন্দ রেলগেটে হামলার ঘটনায় ইউনুস মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
এই জামিনের ঘটনা স্থানীয়ভাবে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের একাংশ এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলেছেন, “যারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে, তাদের জামিন দেওয়া ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।” অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা দাবি করেছেন, এই মামলাগুলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ এবং তাদের নেতারা নির্দোষ। তারা জামিনকে “ন্যায়বিচারের জয়” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজবাড়ীতে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল, এই হামলাগুলো স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতারা পরিকল্পিতভাবে চালিয়েছিল। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, হামলাকারীরা লাঠি, লোহার রড ও দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের আহত করেছিল। তবে, আদালত এই চার নেতার জামিন মঞ্জুর করায় মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই জামিন রাজনৈতিক চাপের ফল হতে পারে। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো নিয়ে বিতর্ক চলছে। কেউ কেউ মনে করেন, এটি বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা কমাতে পারে। তবে, আইনজীবীরা বলছেন, জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে আদালত আইনি প্রক্রিয়া মেনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই ঘটনা রাজবাড়ীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির ওপর নতুন আলোকপাত করেছে। ভবিষ্যতে এই মামলার বিচার কীভাবে এগোবে, তা নির্ভর করছে আদালতের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর। এখন সবার দৃষ্টি জামিনপ্রাপ্ত এই নেতাদের ভূমিকা ও আন্দোলনকারীদের প্রতিক্রিয়ার দিকে।