বাংলাদেশের পত্রিকা, কাজ করে ভারতের হয়ে
“বাংলাদেশের পত্রিকা, কিন্তু কাজ করছে ভারতের হয়ে?”—এই প্রশ্নটি এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক মাধ্যম থেকে চায়ের দোকানের আড্ডা পর্যন্ত। কেউ বলছেন এটি সাংবাদিকতার এক ভয়ংকর অবক্ষয়, কেউ বলছেন এটি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে এক নীরব যুদ্ধ। আর এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে দেশের একটি সময়ের প্রভাবশালী গণমাধ্যম—দ্য ডেইলি স্টার।
ঘটনার সূচনা: দিনাজপুরে হিন্দু নেতার মৃত্যু এবং বিতর্কিত প্রতিবেদন
কিছুদিন আগে দিনাজপুরে ভবেশ নামে এক হিন্দু কমিউনিটির নেতার মৃত্যু হয়। ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম দাবি করে, তিনি অপহরণের পর নির্মমভাবে হত্যা হন। আর সেই অভিযোগের রসদডেইলি স্টার—যাদের এক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল:
“Hindu community leader beaten to death after abduction in Dinajpur.”
সমস্যার শুরু এখান থেকেই।
তদন্ত করে জানা যায়, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট তখনো আসেনি। ভিডিও ফুটেজে কোথাও মারধরের চিহ্নও নেই। বরং স্থানীয় সূত্র বলছে, পাওনাদারদের ডাকে ভবেশ একটি হোটেলে যান এবং সেখানেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
তবে, এসব তথ্য উপেক্ষা করে ডেইলি স্টার এমন একটি খবর ছাপায় যা পরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কড়া বিবৃতি দিতে উৎসাহিত করে। ভারতের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থা ভয়াবহ।”
দেরিতে স্বীকার, কিন্তু ক্ষতি হয়ে গেছে অনেক
পরবর্তীতে ডেইলি স্টার নিজেদের প্রতিবেদনে ভুল স্বীকার করে সংশোধনী প্রকাশ করলেও, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। ভারতের শত শত সংবাদমাধ্যম তখন সেই প্রথম খবরে ভর করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এক প্রকার বৈদেশিক প্রোপাগান্ডা চালিয়ে গেছে—কেউ সেই খবর আর সংশোধন করেনি, সরায়নি।
পুরনো বিতর্ক নতুন করে জেগে ওঠে
এই ঘটনা যেন আবারও মনে করিয়ে দিল ২০১৯ সালের সেই আলোচিত ঘটনা, যখন ট্রাম্প ও মোদির বৈঠকের একটি অংশ বিকৃত করে প্রচার করেছিল দেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। ট্রাম্পের একটি মন্তব্য ছিল, “This is Modi’s issue.” আর তা নিয়ে দেশের কিছু সংবাদমাধ্যম লিখে ফেলে—“বাংলাদেশের বিষয় মোদির হাতে ছেড়ে দিলেন ট্রাম্প!”
তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভ: ‘ডেইলি স্টার নয়, দিল্লি স্টার!’
ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক অভূতপূর্ব প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। অনেকেই ডেইলি সদিল্লি স্ট’ বলে ডাকতে শুরু করেন। এমনকি তাদের অফিসে বিক্ষোভ হয়, সাইনবোর্ডে কেউ কেউ লিখে দেনDelhi Star।
তরুণরা প্রশ্ন তুলছে—এগুলো কি নিছক ভুল? নাকি পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে? কেন এই ভুলগুলো সবসময় ভারতের স্বার্থ রক্ষা করে, কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে তেমন ‘ভুল’ হয় না?
ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবেদন কোথায়?
উল্লেখযোগ্য যে, ভারতে যখন মুসলমানদের গরুর মাংসের নামে পিটিয়ে মারা হয়, মসজিদ গুঁড়িয়ে ফেলা হয়—তখন বাংলাদেশের বড় কোনো পত্রিকায় সেসব ঘটনা নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য হয় না। অথচ বাংলাদেশের সামান্য কোনো ঘটনা নিয়ে যদি ভারতের সংখ্যালঘু ইস্যু উসকে দেওয়া যায়—সেই সুযোগ হাতছাড়া করে না কিছু মিডিয়া।
এটা কি এক ধরনের আত্মঘাতী সাংবাদিকতা নয়? প্রশ্ন অনেক, উত্তর অজানা।
এখন সময় প্রশ্ন তোলার
আজ বাংলাদেশের পাঠক, তরুণ প্রজন্ম, এমনকি সাধারণ মআমাদের মিডিয়ার একটি অংশ কি আদৌ বাংলাদেশের হয়ে কথা বলছে? নাকি তারা ভারতের প্রপাগান্ডা মেশিনের অংশ হয়ে উঠেছে?
একটি জাতির মিডিয়া যদি সত্য নয়, বরং রাজনৈতিক স্বার্থে মিথ্যা ছড়াতে থাকে, তবে সেখানে স্বাধীনতা কেবল একটা শব্দ হয়ে পড়ে।