মঙ্গলবার, ২২শে এপ্রিল, ২০২৫| রাত ১১:১৩

গাজার ফিলিস্তিনিরা চরম অবিচারের শিকার: মিসরের কপটিক পোপ

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ২২, ২০২৫ ৮:৪২ অপরাহ্ণ
গাজার ফিলিস্তিনিরা চরম অবিচারের শিকার: মিসরের কপটিক পোপ

গাজার ফিলিস্তিনিরা চরম অবিচারের শিকার: মিসরের কপটিক পোপ

মিসরের কপটিক অর্থডক্স খ্রিস্টান চার্চের প্রধান পোপ টাওয়াড্রোস দ্বিতীয় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান সামরিক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি এই হামলাকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি “চরম অবিচারের” একটি জঘন্য উদাহরণ হিসেবে অভিহিত করেছেন। বার্তাসংস্থা আনাদোলু রোববার (২০ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

পোপ টাওয়াড্রোসের বক্তব্য
খ্রিস্টানদের পবিত্র ইস্টার উৎসব উপলক্ষে মিসরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পোপ টাওয়াড্রোস বলেন, “গাজার ফিলিস্তিনিরা প্রতিদিন তাদের মাতৃভূমির ধ্বংসের মধ্যে দিয়ে ভয়াবহ অবিচারের শিকার হচ্ছেন। তারা যে কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তা মানবতার জন্য একটি কলঙ্ক।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, মিসরের সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থা গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বা স্বেচ্ছায় স্থানান্তরের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, “প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি স্পষ্টভাবে বলেছেন, মিসর কখনো এই অবিচারের অংশ হবে না। আমরা ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজ ভূমিতে থাকার অধিকারের পক্ষে রয়েছি।”

পোপ টাওয়াড্রোস আরও জানান, গাজার পরিস্থিতি নিয়ে মিসরের কপটিক চার্চ এবং দেশটির প্রধান ইসলামিক প্রতিষ্ঠান আল-আজহার একই অবস্থানে রয়েছে। তিনি বলেন, “আল-আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম শেখ আহমেদ আল-তাইয়েব এবং আমরা একত্রে একই কণ্ঠে বলছি, বিশ্বের বিবেককে এখনই জাগ্রত হতে হবে। আমাদের গাজার ভাই-বোনদের রক্ষা করতে হবে।”

গাজার পরিস্থিতি
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ব্যাপক সামরিক অভিযান চালাচ্ছে। এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৫১,২০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী এবং শিশু। এছাড়া, গাজার অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে, এবং মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। খাদ্য, পানি, এবং চিকিৎসা সুবিধার অভাবে গাজার জনগণ জীবন-মরণের সংগ্রামে লিপ্ত।

ইসরায়েলের এই অভিযানকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকেই মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচনা করছে। তবে, ইসরায়েল এবং তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এই অভিযানকে “আত্মরক্ষা” হিসেবে দাবি করে আসছে।

ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তর প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক
গাজার ফিলিস্তিনিদের পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ রয়েছে। গত মাসে মিসরের নেতৃত্বে একটি জরুরি আরব সম্মেলনে গাজার পুনর্গঠনের জন্য ৫৩ বিলিয়ন ডলারের একটি পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এই পরিকল্পনার মূল শর্ত ছিল, ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে কোনোভাবেই স্থানান্তর করা যাবে না। মিসর এবং অন্যান্য আরব দেশগুলো এই অবস্থানে দৃঢ় রয়েছে।

কিন্তু ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি বিতর্কিত পরিকল্পনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, যেখানে গাজার জনগণকে মিসর, জর্ডান এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশে স্থানান্তরের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই প্রস্তাব আরব দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর কাছ থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।

মিসর এবং জর্ডান স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তারা ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের এই প্রস্তাব মেনে নেবে না। তারা মনে করে, এটি ফিলিস্তিনিদের তাদের মাতৃভূমি থেকে উচ্ছেদের একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা, যা ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলনের মূল লক্ষ্যকে ব্যর্থ করে দেবে।

মিসরের অবস্থান
মিসর গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে তাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। প্রেসিডেন্ট আল-সিসি বারবার বলেছেন, গাজার জনগণকে তাদের ভূমি থেকে বিতাড়িত করার যেকোনো প্রচেষ্টা মিসর কখনো সমর্থন করবে না। তিনি গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এবং ইসরায়েলের হামলা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।

পোপ টাওয়াড্রোসের মতে, মিসরের ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ফিলিস্তিনিদের অধিকার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ। তিনি বলেন, “মিসরের কপটিক চার্চ এবং আল-আজহার একই লক্ষ্যে কাজ করছে। আমরা চাই, গাজার মানুষ তাদের নিজ ভূমিতে শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করুক।”

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা
গাজার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ চলছে। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন গাজায় ইসরায়েলের হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে তদন্তের দাবি জানিয়েছে। তবে, যুক্তরাষ্ট্র এবং কিছু পশ্চিমা দেশ ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে।

পোপ টাওয়াড্রোসের আহ্বানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি গাজার মানুষের প্রতি দায়িত্ব পালনের বার্তা রয়েছে। তিনি বলেন, “বিশ্বের বিবেক এখন জাগ্রত হওয়া উচিত। গাজার মানুষের কষ্ট আর কতদিন অব্যাহত থাকবে? আমাদের সবাইকে একত্রে কাজ করে তাদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।”

গাজার ভবিষ্যৎ
গাজার চলমান সংকট শুধুমাত্র একটি আঞ্চলিক সমস্যা নয়, বরং এটি বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার এবং ন্যায়বিচারের প্রশ্ন। ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা এবং ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের প্রস্তাব এই সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে। মিসর এবং আরব দেশগুলোর দৃঢ় অবস্থান ফিলিস্তিনিদের পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন হলেও, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া এই সংকটের সমাধান কঠিন।

পোপ টাওয়াড্রোসের এই বক্তব্য গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি বিশ্বব্যাপী সংহতি জোরদার করতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাঁর আহ্বান এবং মিসরের অবস্থান ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে নতুন গতি সঞ্চার করতে পারে।

সূত্র: আনাদোলু

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি