চলতি অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতির চাপে এনবিআর, বাড়ছে প্রতিদিনের লক্ষ্যমাত্রা
২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে এসে ব্যাপক রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই থেকে মার্চ) রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। বাকি ৩ মাসে ঘাটতি পুষিয়ে নিতে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে হবে এনবিআরকে, যা প্রথম ৯ মাসের দৈনিক গড় আদায় ৯৫০ কোটি টাকার চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বেশি।
চলতি অর্থবছরের জন্য সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯ মাসে আদায় হয়েছে মাত্র ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ২ লাখ ৭ হাজার ১৩ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করতে হবে।
যদিও আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও আমদানি শুল্ক খাতে কিছুটা প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে, কিন্তু তাতেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। আয়কর খাতে আদায় হয়েছে ৮৬ হাজার ৯২১ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২৯ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা কম। মূসক খাতে ঘাটতি ১৯ হাজার ৪৩৮ কোটি এবং শুল্ক খাতে ঘাটতি ১৬ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।
এনবিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্চে ঈদুল ফিতরের ছুটির প্রভাব এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর কারখানা স্থানান্তরের কারণে অন্তত ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় পিছিয়ে গেছে। এছাড়া বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার অবদানও মার্চ মাসে যোগ হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে এনবিআরের ওপর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর পক্ষ থেকেও চাপ রয়েছে। সংস্থাটি চলতি অর্থবছরেই দেশের কর-জিডিপি অনুপাত ৭.৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৯ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য দিয়েছে। অথচ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা, আমদানি সংকোচন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা রাজস্ব আহরণকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন।
এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “প্রতিবছরই উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, যা বাস্তবতার সঙ্গে সবসময় সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এবার শুরুতে লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, যা পরে কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি করা হয়। কিন্তু সেটিও অর্জন এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
বর্তমানে এনবিআরের সামনে একাধিক চ্যালেঞ্জ—স্বল্প সময়ের মধ্যে বিশাল ঘাটতি পূরণ, আয়কর রিটার্ন দাখিল বৃদ্ধি, অনলাইন মূসক ব্যবস্থার সম্প্রসারণ এবং কর ফাঁকি রোধে নজরদারি জোরদার করা। একইসঙ্গে কর কাঠামো পুনর্বিন্যাস, করজালের সম্প্রসারণ এবং অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিকে আনুষ্ঠানিক খাতে আনার দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন।