সফর সংক্ষিপ্ত করে যুক্তরাজ্য থেকে ‘পালালেন’ ইসরায়েলি মন্ত্রী
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সার যুক্তরাজ্যে সফর সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত দেশে ফিরে গেছেন বলে অভিযোগ করেছে লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন গ্লোবাল লিগেল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (জিএলএএন)। সংগঠনটি জানিয়েছে, গিদিয়ন সারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আনুষ্ঠানিক আবেদন করার পর তিনি হঠাৎ করে যুক্তরাজ্য ছাড়েন। এ ঘটনাকে জিএলএএন ‘পালানো’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, জিএলএএন ছাড়াও হিন্দ রজব ফাউন্ডেশন নামে আরেকটি সংগঠন গিদিয়ন সারের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার জন্য আবেদন করেছিল। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্ম এক্সে এক পোস্টে জিএলএএন জানায়, “জরুরি: আমরা জানতে পেরেছি, গিদিয়ন সার তার যুক্তরাজ্য সফর সংক্ষিপ্ত করে পালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি গুরুতর অপরাধের অভিযোগে তদন্তাধীন একজন অভিযুক্ত। যদি তাকে দেখেন, লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশকে জানান। তবে তার কাছে যাবেন না, কারণ তার সঙ্গে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী থাকতে পারে।” পোস্টটিতে গিদিয়ন সারের একটি ছবিও যুক্ত করা হয়।
### সফরের পটভূমি ও বৈঠক
ইসরায়েলি ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার গিদিয়ন সার গোপনে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের বরাত দিয়ে জানায়, এটি ছিল একটি ‘ব্যক্তিগত বৈঠক’। বৈঠকে গাজা উপত্যকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। স্কটল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানায়, গিদিয়ন সারের শনিবার পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে থাকার কথা ছিল, কিন্তু তিনি নির্ধারিত সময়ের আগেই দেশে ফিরে যান।
### গিদিয়ন সারের বিরুদ্ধে অভিযোগ
গিদিয়ন সারের বিরুদ্ধে গাজায় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে, ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতাল অবরুদ্ধ করার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। এই সময়ে হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মী ও রোগীদের ওপর হামলা চালানো হয় এবং হাসপাতালের পরিচালক ডা. হুসাম আবু সাফিয়াকে অপহরণ করা হয়।
এছাড়া, গিদিয়ন সার গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং প্রকাশ্যে গাজার অবরোধ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। এই পদক্ষেপগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যার জন্য তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন করা হয়।
### আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
গিদিয়ন সারের যুক্তরাজ্য থেকে হঠাৎ প্রস্থান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ঘটনাকে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে জবাবদিহিতা এড়ানোর প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে। জিএলএএন এবং হিন্দ রজব ফাউন্ডেশনের মতো সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে গাজায় ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছে।
এর আগে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। গিদিয়ন সারের বিরুদ্ধে আবেদনটি এই ধরনের আইনি পদক্ষেপেরই একটি অংশ।
### পটভূমি ও তাৎপর্য
গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান এবং মানবিক সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র সমালোচনা চলছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সামরিক অভিযানে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, এবং গাজার অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে জবাবদিহিতার দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।
গিদিয়ন সারের যুক্তরাজ্য থেকে হঠাৎ প্রস্থান এই প্রেক্ষাপটে উল্লেখযোগ্য। বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান চাপ এবং আইনি ঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়। তবে ইসরায়েল সরকার এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।
সূত্র: আলজাজিরা, দ্য নিউ আরব, দ্য গার্ডিয়ান