শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| রাত ৯:১৫

হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের হুমকি ট্রাম্পের

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ১৮, ২০২৫ ৮:১৫ অপরাহ্ণ
হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের হুমকি ট্রাম্পের

হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের হুমকি ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রাচীন ও খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। সরকারের শর্ত মানতে অস্বীকৃতি জানানোয় এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য নির্ধারিত ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি ফেডারেল তহবিল স্থগিত করা হয়েছে। এবার বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের হুমকিও দেওয়া হয়েছে অভিজাত এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে।
স্থানীয় সময় বুধবার (১৬ এপ্রিল), যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, হার্ভার্ডকে এখন থেকে তাদের ভর্তি ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে হবে। একই সঙ্গে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য সরাসরি সরকারের কাছে সরবরাহ করতে হবে। আর এই নির্দেশনা মানতে ব্যর্থ হলে বিশ্ববিদ্যালয়টির ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি অনুমোদন’ বাতিল করে দেওয়া হবে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সেক্রেটারি ক্রিস্টি নওম তার বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে জানান, হার্ভার্ডে ইহুদিবিদ্বেষী কার্যক্রম এবং ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলন বৃদ্ধি পেয়েছে—যা দমন করতেই তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাঁর ভাষায়, “আমরা জানতে চেয়েছি, কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে সহিংসতা বা হুমকিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত কি না।”
চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ অন্য শিক্ষার্থী বা কর্মীদের হুমকি দিয়েছেন কি না, শিক্ষা পরিবেশে বিঘ্ন ঘটিয়েছেন কি না কিংবা কোনো বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন কি না—সে সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সরকারকে জানাতে হবে।
এছাড়া হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ যদি এই তথ্য সরবরাহে সহযোগিতা না করে বা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে, তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির ‘স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম’ (SEVP) সার্টিফিকেশন বাতিল করা হবে, যার ফলে সেখানে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাবে।
এর আগেই ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের করমুক্ত মর্যাদা বাতিল করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব পরিষেবাকে (IRS) নির্দেশ দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তও বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য বড় এক আর্থিক ধাক্কা হতে পারে।
হার্ভার্ডের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই চিঠি সম্পর্কে অবগত এবং তারা সরকারের চাপে নিজেদের নীতি বা স্বাধীনতা থেকে একচুলও সরে আসবে না। মুখপাত্রের ভাষায়, “আমরা বাকস্বাধীনতা এবং সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর অধিকারে বিশ্বাসী। সরকার যতই চাপ দিক না কেন, আমরা আমাদের স্বাধীনতা রক্ষা করব।”
বুধবার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “হার্ভার্ডকে এখন আর শিক্ষার উপযুক্ত জায়গা হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। এটি এখন শুধু ঘৃণা, বোকামি আর রাজনৈতিক পক্ষপাত শেখায়। এদের ফেডারেল তহবিলও বন্ধ করে দেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প প্রশাসন অন্তত ৬০টি বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘ইহুদিবিরোধী কার্যক্রম’ নিয়ে পর্যালোচনার জন্য তালিকাভুক্ত করে, যার মধ্যে হার্ভার্ড অন্যতম।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত মার্কিন শিক্ষানীতিতে একটি নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারে এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও আগমন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্র: হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট, ট্রুথ সোশ্যাল, এএফপি

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি