তীব্র গরমেও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে গরম পানি
গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরমে ঠান্ডা পানি পান করাই স্বাভাবিক মনে হয়, এবং প্রায় সবাই সেটাই করে থাকেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সময়ে গরম পানি পান করাও হতে পারে শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি অভ্যাস। যদিও ঠান্ডা পানি তাৎক্ষণিক স্বস্তি দেয়, তবে গরম পানি দীর্ঘমেয়াদে শরীরের ভেতরে কাজ করে বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। হজমে সহায়তা, টক্সিন দূরীকরণ, এমনকি সঠিকভাবে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতেও গরম পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
গরম পানি প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ারের মতো কাজ করে। ঠান্ডা পানি রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত করে রক্ত চলাচলকে ধীর করে দেয়, যার ফলে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। কিন্তু গরম পানি রক্তনালীগুলোকে প্রসারিত করে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং লিভার ও কিডনিকে বর্জ্য পদার্থ দূর করতে সহায়তা করে। একইসঙ্গে এটি ঘাম এবং প্রস্রাবের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা টক্সিন দূর করার অন্যতম প্রধান উপায়।
গ্রীষ্মে হজমজনিত সমস্যাও বেড়ে যায়। পেট ফাঁপা, গ্যাস, কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যায় ভোগেন অনেকে। ঠান্ডা পানি অন্ত্রে ধাক্কা দেয় এবং হজমে সহায়ক এনজাইমের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। অপরদিকে গরম পানি অন্ত্রের তাপমাত্রা ঠিক রাখে, হজম প্রক্রিয়া মসৃণ রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এমনকি জার্নাল অফ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি-র একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে উষ্ণ পানি গ্রহণের ফলে মলত্যাগের হার ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
অনেক সময় ঠান্ডা পানি শরীরকে হাইড্রেটেড বোধ করিয়ে দেয়, যদিও বাস্তবে তা প্রয়োজনীয় পরিমাণে পান না করায় হাইড্রেশন ঠিকমতো হয় না। কিন্তু ধীরে ধীরে গরম পানি পান করলে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল গ্রহণ করে এবং দীর্ঘস্থায়ী হাইড্রেশন নিশ্চিত হয়।
তবে গরম পানির উপকারিতা নিয়ে গবেষণা এখনও মিশ্র। NCBI-র একটি গবেষণায় অন্ত্রের কার্যকারিতা ও পেটের অস্বস্তি কমাতে এর ইতিবাচক ভূমিকার কথা বলা হলেও কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, পানির তাপমাত্রার চেয়ে নিয়মিত পানি পান করাটাই বেশি জরুরি। তবে যারা নিয়মিত গরম পানি পান করেন, তারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর সুফল অনুভব করতে পারেন।
তাই গ্রীষ্মের দাবদাহে ঠান্ডা পানির চেয়ে বরং হালকা গরম পানি হতে পারে আপনার শরীরের জন্য গোপন এক আশীর্বাদ।