ইউরোপে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক অপরাধ বাড়ছে: ইইউ কর্মকর্তা
ইউরোপ জুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণামূলক অপরাধ উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাহী শাখা ইউরোপীয় কমিশনের মুসলিমবিদ্বেষ প্রতিরোধ বিষয়ক সমন্বয়ক ম্যারিয়ন লালিসে এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিশেষ করে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে, যখন ফিলিস্তিনের গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়, তখন থেকে এই ধরনের ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
ম্যারিয়ন লালিসে রোববার (১৩ এপ্রিল) তুরস্কের আন্তালিয়া শহরে তুরস্কভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক আন্তালিয়া ডিপ্লোমেসি ফোরামের এক সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। সেখানে তুরস্কের সরকারি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “গত বছরের ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইউরোপে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক অপরাধের হার বেড়েছে। এর মধ্যে জার্মানিতে এই হার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে, প্রায় ১৪০ শতাংশ।”
তিনি আরও বলেন, “কারও ধর্মীয় বা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু তা কখনোই কোনো জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর অজুহাত হতে পারে না। মুসলিমরা ইউরোপীয় সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের প্রতি বিদ্বেষ আমাদের সমন্বিত সমাজের মূল্যবোধের বিরুদ্ধে যায়।”
ম্যারিয়ন উল্লেখ করেন, ইউরোপে মুসলিমবিরোধী বর্ণনা (ন্যারেটিভ) সমাজে, সংবাদমাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। তিনি বলেন, “এই ন্যারেটিভ আর শুধু শব্দ বা কথায় সীমাবদ্ধ নেই। এটি এখন ঘৃণামূলক অপরাধের মতো বাস্তব কর্মকাণ্ডে রূপ নিচ্ছে। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।”
তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ইউরোপের বেশিরভাগ মানুষ এখনো মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে না। তিনি বলেন, “ইউরোপের অধিকাংশ জনগণ মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব রাখে না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে মূল্যবোধ ও আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত, তা এখনো দৃঢ়ভাবে টিকে আছে।”
ম্যারিয়ন মনে করেন, এই ক্রমবর্ধমান বিদ্বেষ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে এর জন্য সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, “সাংবাদিকরা সত্য প্রকাশের পাশাপাশি সংবাদ উপস্থাপনকে আরও বৈচিত্র্যময় করতে পারেন। সংবাদমাধ্যমের নির্বাহীরাও মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ উসকে দেওয়ার মতো বিষয়বস্তু প্রকাশের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে পারেন।”
ইউরোপে মুসলিম সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশে বসবাস করছে এবং তারা সমাজের অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ করে গাজা সংঘাতের প্রেক্ষাপটে মুসলিমবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকে উদ্বিগ্ন। এই ঘৃণামূলক অপরাধের মধ্যে রয়েছে শারীরিক হামলা, মৌখিক নির্যাতন এবং সামাজিক বৈষম্য।
ইইউ কর্মকর্তা ম্যারিয়ন লালিসে জোর দিয়ে বলেন, এই সমস্যা সমাধানে সরকার, সমাজ এবং সংবাদমাধ্যমের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তিনি বলেন, “আমাদের সমাজে সহনশীলতা ও পারস্পরিক সম্মানের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। এটি সম্ভব যদি আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করি।”
ইউরোপে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক অপরাধের এই উত্থান সামাজিক সম্প্রীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ইইউ এই সমস্যা মোকাবিলায় বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সচেতনতা বৃদ্ধি, শিক্ষা প্রচার এবং আইনি পদক্ষেপ। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সমস্যার সমাধানে আরও ব্যাপক এবং দীর্ঘমেয়াদি কৌশল প্রয়োজন।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি