মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আহমাদ বাদাবির মৃত্যু
মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আহমাদ বাদাবি আর নেই। ৮৫ বছর বয়সে সোমবার (১৪ এপ্রিল) তিনি কুয়ালালামপুরের জাতীয় হার্ট ইনস্টিটিউটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তার পরিবার এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে।
জাতীয় হার্ট ইনস্টিটিউটের এক বিবৃতিতে বলা হয়, রোববার (১৩ এপ্রিল) শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে আব্দুল্লাহ হাসপাতালে ভর্তি হন। তার শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতি হওয়ায় তাকে তাৎক্ষণিকভাবে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসকদের সব ধরনের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে তিনি শান্তিতে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তার পরিবারের সদস্যরা এবং ঘনিষ্ঠজনরা তার পাশে ছিলেন।
আব্দুল্লাহর জামাতা এবং মালয়েশিয়ার সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী খাইরি জামালউদ্দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টের মাধ্যমে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। তবে তিনি মৃত্যুর নির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু উল্লেখ করেননি।
আব্দুল্লাহ আহমাদ বাদাবি ২০০৩ সালে মালয়েশিয়ার পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার আগে দেশটির আধুনিক রূপকার হিসেবে পরিচিত প্রবীণ রাজনীতিক মাহাথির মোহাম্মদ ২২ বছর ক্ষমতায় থাকার পর পদত্যাগ করেন। আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে মালয়েশিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়।
ক্ষমতায় থাকাকালীন আব্দুল্লাহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন এবং দেশব্যাপী ব্যাপক অভিযান শুরু করেন। তিনি মধ্যপন্থী ইসলামের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়েশিয়ায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির দিকে বিশেষ জোর দেন। তার শাসনামলে ‘ইসলাম হাদারি’ নামে একটি দর্শন প্রচার করা হয়, যা আধুনিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়।
তবে তার আমলে জ্বালানি ভর্তুকি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত দেশে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। এই নীতির কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়, যা জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন জোট বারিশান ন্যাশনাল (বিএন) সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়, যা মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালে আব্দুল্লাহ পদত্যাগ করেন, এবং তার স্থলাভিষিক্ত হন নাজিব রাজাক।
আব্দুল্লাহর মৃত্যুতে মালয়েশিয়া একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে হারালো। তার শান্ত ও সৌম্য ব্যক্তিত্ব তাকে জনগণের কাছে ‘পাক লাহ’ নামে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। তিনি দেশের উন্নয়নে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করেছেন, যদিও তার শাসনামল বিতর্ক মুক্ত ছিল না।
মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনীতিকরা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। অনেকে তার সততা, ধর্মীয় সহনশীলতা এবং জনগণের প্রতি তার সহানুভূতিশীল মনোভাবের প্রশংসা করছেন।
জাতীয় হার্ট ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, আব্দুল্লাহর শেষকৃত্যের বিষয়ে পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। মালয়েশিয়ার সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেনি, তবে শিগগিরই জাতীয় শোক ঘোষণা করা হতে পারে।
আব্দুল্লাহ আহমাদ বাদাবির মৃত্যু মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে একটি যুগের অবসান ঘটালো। তার অবদান দেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
সূত্র: রয়টার্স