কাশ্মিরে সংঘর্ষে ভারতীয় সৈন্যসহ নিহত ৪
ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরে স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষে একজন ভারতীয় সৈন্যসহ মোট চারজন নিহত হয়েছেন। শনিবার (১২ এপ্রিল, ২০২৫) ভারতীয় সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। পৃথক দুটি সংঘর্ষে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
প্রথম ঘটনাটি ঘটে বুধবার কিশতোয়ার জেলার প্রত্যন্ত বনাঞ্চলে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, সেখানে তারা স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীর তিন সদস্যের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জড়ায়। এই সংঘর্ষে তিনজন সন্দেহভাজন যোদ্ধা নিহত হন। সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেবিএস রাঠি সাংবাদিকদের জানান, এই অভিযানে অস্ত্র ও যুদ্ধের সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর হোয়াইট নাইট কর্পস সামাজিক মাধ্যম এক্সে জানিয়েছে, সংঘর্ষস্থল থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অস্ত্র জব্দ করা হয়।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার গভীর রাতে সুন্দরবানী জেলায়। ভারত-পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) সংলগ্ন এলাকায় এই সংঘর্ষে একজন ভারতীয় সৈন্য নিহত হন। সেনাবাহিনীর হোয়াইট নাইট কর্পস জানায়, সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের একটি চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়। গত মাসেও এই অঞ্চলে সন্দেহভাজন স্বাধীনতাকামীদের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশের চার সদস্য নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিলেন।
জম্মু-কাশ্মিরের ইতিহাস দীর্ঘদিনের সংঘাতে ভরা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তির পর ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তখন থেকে কাশ্মির নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। ভারতের একমাত্র মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল জম্মু-কাশ্মিরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উভয় দেশই দাবি জানায়। হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এই অঞ্চলের জন্য দুই দেশ অতীতে অন্তত তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে।
১৯৮৯ সালে ভারত-বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে জম্মু-কাশ্মিরে বহুবার সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। এই অঞ্চলে দশকের পর দশক ধরে চলা সংঘাতে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো স্বাধীনতা বা পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত হওয়ার দাবিতে লড়াই চালিয়ে আসছে। ভারত অবশ্য এই গোষ্ঠীগুলোকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে এবং দাবি করে যে এদের পেছনে পাকিস্তানের সমর্থন রয়েছে।
ভারত এই অঞ্চলে স্থায়ীভাবে প্রায় পাঁচ লাখ সৈন্য মোতায়েন করে রেখেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সহিংসতার ঘটনা কিছুটা কমলেও, সম্পূর্ণ শান্তি এখনো অধরা। সামরিক অভিযানের পাশাপাশি ভারতীয় বাহিনী সীমান্তে কঠোর নজরদারি বজায় রেখেছে। তবে, এই ধরনের সংঘর্ষে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ এবং অসন্তোষ বাড়ছে, যা অঞ্চলটির পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
কাশ্মিরের সংঘাত শুধু ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনাই নয়, বরং স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রা ও নিরাপত্তার ওপরও গভীর প্রভাব ফেলছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারবার উভয় দেশকে সংযমী হওয়ার আহ্বান জানালেও, এই সংঘাতের স্থায়ী সমাধান এখনো অধরাই রয়ে গেছে।
সূত্র: এএফপি