তহবিল সংকটে শত শত কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা ‘দ্য অফিস ফর কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাফেয়ার্স’ (ওচা) তীব্র তহবিল সংকটের কারণে প্রায় ২০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংস্থাটির প্রধান টম ফ্লেচার এ বিষয়ে একটি চিঠির মাধ্যমে কর্মীদের জানিয়েছেন, যা ওচা’র ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বের ৬০টি দেশে ওচা’র শাখা কার্যালয় রয়েছে, যেখানে প্রায় ২,৬০০ জন কর্মী কাজ করছেন। ফ্লেচারের চিঠিতে বলা হয়েছে, তহবিল ঘাটতির কারণে এই কর্মীদের মধ্যে কমপক্ষে ৫০০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হবে। তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে তহবিলের অভাব, অতিরিক্ত চাপ এবং বিভিন্ন আক্রমণের মুখে রয়েছি। এখন আমাদের সামনে কঠিন বাজেট কাটছাঁটের একটি ঢেউ অপেক্ষা করছে।”
জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বার্ষিক চাঁদা এবং ধনী দাতা দেশগুলোর আর্থিক সহায়তার ওপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই ছিল জাতিসংঘের সবচেয়ে বড় দাতা। কিন্তু গত ১৯ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে জাতিসংঘের জন্য বরাদ্দ সহায়তাসহ সব ধরনের বিদেশি অনুদান সাময়িকভাবে স্থগিত করেন। তিনি জানান, ওয়াশিংটনের দেওয়া এই সহায়তাগুলো আইন মেনে প্রদান করা হয়েছে কি না, তা যাচাই করা হচ্ছে।
ওচা’র কর্মকর্তাদের বরাতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রত্যাশিত অর্থ সহায়তা না আসায় সংস্থাটি বর্তমানে ৬ কোটি ডলারের তহবিল ঘাটতির মুখে পড়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় বাজেট কমানোর অংশ হিসেবে কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ক্যামেরুন, কলম্বিয়া, ইরিত্রিয়া, ইরাক, লিবিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্কের মতো আটটি দেশে ওচা তাদের কার্যক্রম বন্ধ বা ব্যাপকভাবে সীমিত করার পরিকল্পনা করছে।
এই সিদ্ধান্তের প্রভাব নিয়ে ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা সংস্থা। ইরাকভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন আল আমাল অ্যাসোসিয়েশন সিএনএন-কে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “ইরাকে ওচা’র কার্যক্রম বন্ধ হলে দেশের নারীদের অধিকার রক্ষার প্রচেষ্টার ওপর গভীর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।”
তহবিল সংকট ও কর্মী ছাঁটাইয়ের এই সিদ্ধান্ত ওচা’র মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্বের সংকটপীড়িত অঞ্চলগুলোতে সহায়তা অব্যাহত রাখতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে জরুরি অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিচ্ছেন তারা।
সূত্র: সিএনএন