গাজা এক মৃত্যুপুরী, অন্তহীন মৃত্যুর চক্রে বেসামরিক নাগরিকরা – জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলা থামছেই না। প্রায় ১৮ মাস ধরে চলা এই আগ্রাসনে ৫১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। হামলার পাশাপাশি গাজার ওপর কঠোর অবরোধ চলছে, যা সেখানকার জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গাজাকে ‘মৃত্যুপুরী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, “গাজার বেসামরিক নাগরিকরা এখন অন্তহীন মৃত্যুর চক্রে আটকা পড়েছে।”
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বার্তাসংস্থা আনাদোলু এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে গুতেরেস গাজার মানবিক সংকট নিয়ে কঠোর বার্তা দেন। তিনি বলেন, “এক মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় এক ফোঁটা সাহায্য ঢোকেনি। খাবার নেই, জ্বালানি নেই, ওষুধ নেই। বাণিজ্যিক সরবরাহ বন্ধ। সাহায্য শেষ হতেই ভয়াবহতার দরজা আবার খুলে গেছে।”
গুতেরেস ইসরায়েলের অবরোধের তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, “ক্রসিং পয়েন্টে খাবার, ওষুধ, আশ্রয়ের সরঞ্জাম জমা হচ্ছে। কিন্তু ভেতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আটকে আছে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “যুদ্ধবিরতি সম্ভব। আমরা দেখেছি, এটা ত্রাণ পৌঁছাতে এবং জিম্মিদের মুক্তিতে কাজে এসেছে।”
তিনি জেনেভা কনভেনশনের কথা তুলে ধরেন। এই কনভেনশন অনুযায়ী, যুদ্ধের সময় দখলদার শক্তিকে খাদ্য, চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে। গুতেরেস বলেন, “ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট বাধ্যবাধকতা আছে। তাদের মানবিক আইন ও মানবাধিকার আইন মানতে হবে।” তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “ইসরায়েলকে সাহায্য পৌঁছানোর অনুমতি দিতে হবে। কিন্তু এখন কিছুই হচ্ছে না।”
গাজার মানবিক কর্মীদের ‘বীর’ বলে সম্মান জানান গুতেরেস। তিনি বলেন, “এই কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। তাদের সুরক্ষা জরুরি।” গাজায় ত্রাণকর্মীরা প্রতিনিয়ত হামলার শিকার হচ্ছেন।
গাজায় হামলা শুরু হয় ২০২৩ সালের অক্টোবরে। ১৫ মাসের তাণ্ডবের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক চাপে গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি হয়। প্রায় দুই মাস শান্তি ছিল। কিন্তু হামাসের সঙ্গে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে মতভেদে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে আবার বিমান হামলা শুরু হয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ১৮ মার্চ থেকে ১,৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত আর ৩,৬০০-এর বেশি আহত হয়েছেন।
এই হামলা জানুয়ারির যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে। গাজা এখন ধ্বংসস্তূপ। গুতেরেসের বর্ণনায় গাজা যেন জীবন্ত কবর। তিনি বলেন, “এই অবরোধ আর হামলা গাজাকে মৃত্যুর শহরে পরিণত করেছে।”
আন্তর্জাতিক আইনের কথা তুলে তিনি ইসরায়েলের দায়িত্ব স্মরণ করান। তিনি বলেন, “তাদের ত্রাণ পরিকল্পনায় সম্মত হতে হবে। কিন্তু তারা বাধা দিচ্ছে।”
গুতেরেসের এই বক্তব্য গাজার সংকটকে নতুন করে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে। তিনি শান্তির আহ্বান জানান। কিন্তু ইসরায়েলের হামলা আর অবরোধ থামছে না।