চীনা পণ্যে আরও শুল্কের হুমকি ট্রাম্পের, বাণিজ্য যুদ্ধের শংকা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে ঝড় তুলেছেন। সোমবার (৭ এপ্রিল ২০২৫) তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, চীন যদি গত সপ্তাহে মার্কিন পণ্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ৩৪ শতাংশ শুল্ক তুলে না নেয়, তাহলে আগামী বুধবার থেকে চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে। এই হুমকির পর বিশ্ববাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, এবং বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।
ট্রাম্পের এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এলো, যখন তিনি ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে বিশ্ব অর্থনীতিকে অস্থির করে তুলেছেন। গত শনিবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব আমদানি পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়েছে। এর ফলে বিশ্ববাজার থেকে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার মুছে গেছে। এর মধ্যে চীনের সঙ্গে নতুন এই শুল্ক-যুদ্ধের হুমকি বৈশ্বিক বাণিজ্যে নতুন সংকটের আভাস দিচ্ছে।
ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, “চীন আমাদের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ হারিয়েছে। তারা আমাদের পণ্যে শুল্ক বসিয়েছে, এখন আমরা তাদের আরও বড় জবাব দেব।” তিনি বলেন, “চীন যদি পিছু না হটে, তাহলে বুধবার থেকে ৫০ শতাংশ শুল্ক আসছে। এটা আমাদের অর্থনীতির জন্য ওষুধের মতো কাজ করবে।” এর আগে চীন মার্কিন পণ্যে ৩৪ শতাংশ শুল্ক বসিয়ে ট্রাম্পের ৩৪ শতাংশ শুল্কের জবাব দিয়েছিল। এখন দুই দেশের মধ্যে এই শুল্ক-প্রতিশুল্কের লড়াই তীব্র আকার নিচ্ছে।
এই হুমকির প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতি আবারও টালমাটাল। সোমবার মার্কিন শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পতন দেখা গেছে। বৈশ্বিক ব্র্যান্ড এসঅ্যান্ডপি সূচক গত ফেব্রুয়ারির পর সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ নিচে নেমেছে। একজন বিনিয়োগকারী বলেন, “ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কেউ জানে না এর পরিণতি কী হবে।” এশিয়ান ও ইউরোপীয় শেয়ারবাজারেও একই দশা। গোল্ডম্যান স্যাকস, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ বিনিয়োগ ব্যাংক, মার্কিন মন্দার সম্ভাবনা ৪৫ শতাংশে উন্নীত করেছে।
কিছুদিন আগে গণমাধ্যমে খবর ছড়িয়েছিল, ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করতে পারেন। এতে বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছিল। কিন্তু হোয়াইট হাউস এই খবরকে ‘ভুয়া’ বলে উড়িয়ে দেওয়ার পর সোমবার থেকে আবার পতন শুরু হয়। একজন ব্যবসায়ী বলেন, “এই অনিশ্চয়তায় আমরা ঝুঁকি নিতে পারছি না। বাজার আরও নিচে যেতে পারে।”
ট্রাম্প শুল্ক বাড়ানোকে মার্কিন অর্থনীতির জন্য ‘ওষুধ’ বললেও, বিশেষজ্ঞরা এতে মন্দার আশঙ্কা দেখছেন। তারা বলছেন, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। দ্রব্যমূল্য বাড়বে, কোম্পানিগুলোর লাভ কমবে। একজন অর্থনীতিবিদ বলেন, “এটা শুধু চীনের সঙ্গে লড়াই নয়, পুরো বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক নষ্ট করার পথে এগোচ্ছে।”
চীনও পিছপা হচ্ছে না। বেইজিংয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা আমাদের স্বার্থ রক্ষা করব। ট্রাম্প যত শুল্ক বাড়াবেন, আমরাও তত জবাব দেব।” এই দুই পরাশক্তির লড়াইয়ে বিশ্ববাজার কাঁপছে। সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন, “এর দাম কি আমাদেরই দিতে হবে?”
ট্রাম্পের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে আছে বিশ্ব। বুধবার নতুন শুল্ক কার্যকর হলে চীন কী করে, তা গুরুত্বপূর্ণ হবে। এর আগে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার কথা ছিল, কিন্তু ট্রাম্প সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “চীনকে আর সময় দেওয়া হবে না। তারা আমাদের সুবিধা নিয়েছে, এখন শেষ।”