নেতানিয়াহুর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ইসরাইলিদের বিক্ষোভ
ইসরায়েলের তেল আবিবে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন অনেক ইসরাইলি। তাদের একটাই দাবি—গাজায় আটক সব জিম্মির মুক্তির জন্য অবিলম্বে একটি চুক্তি। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেটি তাদের সানাদ এজেন্সি যাচাই করেছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা প্রথমে তেল আবিবের হাবিমা স্কোয়ারে জড়ো হন। এরপর তারা লিকুদ পার্টির সদর দফতরের দিকে এগিয়ে যান। রাস্তায় তাদের ক্ষোভ আর হতাশা স্পষ্ট। তারা নেতানিয়াহুর দলের কার্যালয়কে ‘কাতারি দূতাবাসের সদর দফতর’ বলে ডাকছেন। এই নামটি এসেছে একটি দুর্নীতি কেলেঙ্কারি থেকে, যাকে ‘কাতারগেট’ বলা হচ্ছে।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থার মামলায় অভিযোগ উঠেছে যে, কাতার নেতানিয়াহুর দুই ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাকে অর্থ দিয়েছে। এই টাকা দেওয়া হয়েছে ইসরায়েলি গণমাধ্যমে কাতারের স্বার্থ প্রচারের জন্য। এই অভিযোগে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ক্ষোভ আরও তীব্র হয়েছে। একজন বিক্ষোভকারী বলেন, “আমাদের জিম্মিরা গাজায় আটকা, আর এখানে দুর্নীতি চলছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।”
কাতার অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলছে, “এসব দাবি মিথ্যা। যারা ইসরায়েল আর হামাসের মধ্যে শান্তি প্রচেষ্টাকে বানচাল করতে চায়, তারাই এটা ছড়াচ্ছে।” কাতার দীর্ঘদিন ধরে গাজার জিম্মি সংকটে মধ্যস্থতার চেষ্টা করে আসছে। কিন্তু এই অভিযোগ তাদের ভূমিকাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
বিক্ষোভকারীদের মূল দাবি জিম্মিদের মুক্তি। গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ২৫১ জনকে জিম্মি করেছিল। এখনো অনেকে মুক্ত হয়নি। একজন জিম্মির মা বলেন, “আমার ছেলে ওখানে আছে। আমরা চাই সরকার এখনই চুক্তি করুক।” বিক্ষোভে অনেকে নেতানিয়াহুর সমালোচনা করে বলেন, “তিনি নিজের ক্ষমতা বাঁচাতে জিম্মিদের ভুলে গেছেন।”
লিকুদ কার্যালয়ের সামনে ভিড় জমে। বিক্ষোভকারীরা প্ল্যাকার্ড হাতে নেতানিয়াহুর পদত্যাগও দাবি করেন। একজন বলেন, “তিনি যদি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে না পারেন, তাহলে তিনি এই পদে থাকার যোগ্য নন।” ভিডিওতে তাদের ক্ষোভ আর অধৈর্য স্পষ্ট। রাস্তায় স্লোগান আর হট্টগোলের শব্দ ছড়িয়ে পড়ে।
ইসরায়েলে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ নতুন নয়। গাজার যুদ্ধ ১৮ মাস ধরে চলছে। এতে ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি হলেও মার্চে তা ভেঙে যায়। এখনো জিম্মি সংকট সমাধান হয়নি। বিক্ষোভকারীরা মনে করেন, নেতানিয়াহু এই সংকটে ব্যর্থ।
‘কাতারগেট’ কেলেঙ্কারি বিক্ষোভে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। অভিযোগে বলা হয়, নেতানিয়াহুর উপদেষ্টারা কাতারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রচার চালিয়েছেন। এতে অনেকে ক্ষুব্ধ। একজন বলেন, “এটা দুর্নীতি। আমাদের জিম্মিদের জন্য লড়ার বদলে তারা টাকা নিচ্ছে।”
কাতারের প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, “আমরা শান্তির জন্য কাজ করছি। এই অভিযোগ আমাদের প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।” তারা হামাসের সঙ্গে আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু এই বিতর্ক তাদের অবস্থানকে দুর্বল করছে।
(সূত্র: আল জাজিরা)