বাংলাদেশসহ ১৩ দেশের ওপর সাময়িক ভিসা নিষেধাজ্ঞা সৌদির
পবিত্র হজ মৌসুম ঘনিয়ে আসছে। আর এই সময়ে নিরাপত্তা জোরদার ও বাড়তি ভিড় এড়াতে বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব। বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ ১৩টি দেশের নাগরিকদের জন্য ওমরাহ, ব্যবসা ও পারিবারিক ভিসার ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটি। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে হজের সময়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় সৌদি কর্তৃপক্ষ।
সূত্রের খবর, এই নিষেধাজ্ঞা শুধু ওমরাহ, ব্যবসা আর পারিবারিক ভিসার ক্ষেত্রে কার্যকর হবে। তবে ওয়ার্ক ভিসার ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না। জানা গেছে, এই নিষেধাজ্ঞা জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলতে পারে। জিয়ো নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সিদ্ধান্তের পেছনে হজের সময় অতিরিক্ত ভিড় আর নিরাপত্তার বিষয়টি মূল কারণ।
কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, যারা ওমরাহ ভিসা নিয়ে এখনো সৌদি আরবে আছেন, তারা ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত দেশটিতে প্রবেশ করতে পারবেন। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় যেসব দেশ পড়েছে, তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, নাইজেরিয়া, জর্ডান, আলজেরিয়া, সুদান, ইথিওপিয়া, তিউনিসিয়া আর ইয়েমেন। তবে এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কেউ যদি সৌদি আরবে ঢোকার চেষ্টা করেন বা থেকে যান, তাদের জন্য কঠোর শাস্তি অপেক্ষা করছে। সূত্র বলছে, এমন ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের জন্য সৌদিতে প্রবেশ ও অবস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে।
সৌদি সরকার ইতোমধ্যে পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে। পাকিস্তানি ওমরাহ ভিসাধারীদের ২৯ এপ্রিলের মধ্যে দেশে ফিরে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশসহ অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রেও একই ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সৌদি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, অনেক ভ্রমণকারী দীর্ঘমেয়াদি ভিসায় প্রবেশ করে অনুমতি ছাড়াই হজ করার চেষ্টা করেন। আবার কেউ কেউ অবৈধভাবে থেকে যান। এতে হজের সময় তীব্র ভিড় আর নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি হয়। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতেই এই সিদ্ধান্ত।
একজন কূটনৈতিক সূত্র বলেন, “হজের সময় লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে মক্কায় সমবেত হন। এটি বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকে ভিসার শর্ত ভঙ্গ করে হজে যোগ দেন। ফলে বৈধ হজযাত্রীদের সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এই নিষেধাজ্ঞা সেই সমস্যা সমাধানের একটি উপায়।” সৌদি আরবের এই পদক্ষেপকে অনেকে নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার দিক থেকে যৌক্তিক বলছেন।
বাংলাদেশের অনেকেই প্রতি বছর ওমরাহ করতে সৌদি আরব যান। হজের সময় এই সংখ্যা আরও বাড়ে। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেকের পরিকল্পনায় ভাটা পড়তে পারে। একজন সম্ভাব্য ওমরাহযাত্রী বলেন, “আমরা পরিবার নিয়ে ওমরাহ করতে যাওয়ার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু এখন সব অনিশ্চিত।”
সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা অস্থায়ী। হজ মৌসুম শেষ হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। তবে যারা এখন সৌদিতে আছেন, তাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফিরে আসতে হবে। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ২৯ এপ্রিলের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের জন্যও অনুরূপ নির্দেশনা আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই নিষেধাজ্ঞার পেছনে আরেকটি কারণ হলো অবৈধ অভিবাসন রোধ। অনেকে ওমরাহ বা অন্য ভিসায় গিয়ে সৌদিতে থেকে যান। এটি দেশটির জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন বিশ্লেষক বলেন, “সৌদি আরব হজকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে চায়। এই নিষেধাজ্ঞা তাদের সেই লক্ষ্যের অংশ।”
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, সৌদি দূতাবাস শিগগিরই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবে। এদিকে, যারা ওমরাহ বা ব্যবসার জন্য সৌদি যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন, তারা এখন উদ্বিগ্ন।
হজের সময় সৌদি আরবের এমন কঠোর পদক্ষেপ নতুন নয়। প্রতি বছরই তারা ভিড় নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন নিয়ম জারি করে। তবে এবার ১৩টি দেশের ওপর একযোগে নিষেধাজ্ঞা এসেছে, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।