সরকারে থাকা ছাত্র প্রতিনিধিদের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি ইশরাকের
বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির বিশেষ সহকারী ইশরাক হোসেন জোরালো দাবি তুলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে থাকা ছাত্র প্রতিনিধিদের অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। শনিবার (৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাসে এই মন্তব্য করেন। এই পোস্টে তিনি নির্বাচনের সময়সীমা এবং সরকারের নিরপেক্ষতার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন।
ইশরাক তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যথাসময়ে এই নির্বাচন আদায় করে নেব, ইনশাআল্লাহ।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনতে এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার সঙ্গে তিনি একটি শর্ত জুড়ে দেন, যা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।
তিনি লিখেছেন, “সরকারে থাকা ছাত্র প্রতিনিধিদের অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় নির্বাচনকালীন সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হবে না।” ইশরাকের এই বক্তব্যে স্পষ্ট, তিনি মনে করেন ছাত্র প্রতিনিধিদের উপস্থিতি সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। তিনি এই পদক্ষেপকে জরুরি বলে উল্লেখ করেছেন, যাতে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়।
ইশরাকের এই দাবি দেশের রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে এটি ছাত্র আন্দোলনের ফল হিসেবে দেখা হলেও, এর গঠন ও কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে, যেখানে কয়েকজন ছাত্র প্রতিনিধি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছেন। ইশরাকের মতে, এই প্রতিনিধিরা পদে থাকলে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় তৈরি হতে পারে।
তার এই মন্তব্যে জনগণের ভূমিকার ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা জনগণের শক্তিতে বিশ্বাসী। তারাই নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া যেন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।” ইশরাকের কথায় স্পষ্ট, তিনি ছাত্র প্রতিনিধিদের পদত্যাগকে এই নিরপেক্ষতার প্রথম শর্ত হিসেবে দেখছেন।
এই স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ইশরাক ২০২৫ সালকে একটি সময়সীমা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা আর দেরি চাই না। জনগণও অপেক্ষায় আছে।” তার এই বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি এক ধরনের চাপও প্রকাশ পেয়েছে। তিনি মনে করেন, নির্বাচনের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এখনই ঘোষণা করা উচিত।
ইশরাকের দাবি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। বিএনপি এর আগেও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করেছে। কিন্তু ছাত্র প্রতিনিধিদের পদত্যাগের এই নির্দিষ্ট দাবি এই প্রথম এত স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। একজন বিএনপি সমর্থক বলেন, “ইশরাক যে কথা বলেছেন, তা আমাদের অনেকের মনের কথা। নিরপেক্ষতা না থাকলে নির্বাচনের কোনো মানে হয় না।”
অন্যদিকে, ছাত্র প্রতিনিধিরা এই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক হিসেবে সরকারে যুক্ত হয়েছেন। তাদের সমর্থকরা বলছেন, “তারা জনগণের প্রতিনিধি। তাদের পদত্যাগের দাবি অযৌক্তিক।” এই দুই মতের মধ্যে একটি সংঘাতের আভাস দেখা যাচ্ছে।
ইশরাকের এই পোস্টে তিনি আশাবাদও প্রকাশ করেছেন। “ইনশাআল্লাহ, আমরা জনগণের সঙ্গে নিয়ে এই লড়াই জিতব,” বলে তিনি সমর্থকদের উৎসাহ দিয়েছেন। তবে তিনি এটাও পরিষ্কার করেছেন, নিরপেক্ষতার প্রশ্নে তিনি কোনো আপস করতে রাজি নন।
এই দাবির পর অন্তর্বর্তী সরকার কী জবাব দেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। ইশরাকের কথায় স্পষ্ট, তিনি ছাত্র প্রতিনিধিদের পদত্যাগকে নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে দেখছেন।