ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে ফেসবুকে যা লিখলেন মোদি
থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ষষ্ঠ বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে শুক্রবার, ৪ এপ্রিল, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকের পর মোদি তার ফেসবুক পেজে কয়েকটি ছবি ও একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন, যা দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
মোদি তার পোস্টে লিখেছেন, “আজ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে গঠনমূলক ও জনগণকেন্দ্রিক সম্পর্কের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ।” তিনি আরও জানান, “আমি বাংলাদেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা, অন্তর্ভুক্তি এবং গণতন্ত্রের প্রতি ভারতের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি। সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ এবং বাংলাদেশে হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছি।”
এই বৈঠকের পটভূমি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এর তিন দিন পর, ৮ আগস্ট, ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে ভারত বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নির্যাতনের অভিযোগ তুলে আসছে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ বারবার অস্বীকার করা হয়েছে, বলা হয়েছে এটি বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে তার প্রত্যর্পণ দাবি করে আসছে। এই বৈঠকে ড. ইউনূস এই বিষয়টি আবারও তুলেছেন বলে জানা গেছে। তবে মোদির ফেসবুক পোস্টে হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে কোনো উল্লেখ নেই। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি অবশ্য নিশ্চিত করেছেন, “বৈঠকে হাসিনার বিষয়টি উঠে এসেছিল।” তিনি আরও বলেন, “মোদি বাংলাদেশের সঙ্গে জনগণকেন্দ্রিক সম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছেন এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।”
মোদির পোস্টে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সমর্থনের কথা স্পষ্ট হলেও, হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে নীরবতা প্রশ্ন তুলেছে। বাংলাদেশের জনগণের একটি বড় অংশ মনে করে, হাসিনাকে ফিরিয়ে না আনলে বিচার প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
বৈঠকের ছবিগুলোতে মোদি ও ইউনূসকে হাসিমুখে হাত মেলাতে দেখা গেছে, যা দুই দেশের সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। তবে আলোচনার গভীরতা নিয়ে কৌতূহল রয়ে গেছে। মিশ্রি জানান, “মোদি একটি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পক্ষে ভারতের অবস্থান তুলে ধরেছেন।”
মোদির পোস্টে সংখ্যালঘু ইস্যুতে জোর দেওয়া হলেও, বাংলাদেশের প্রধান দাবি নিয়ে নীরবতা অনেকের মনে প্রশ্ন জাগিয়েছে।
এই বৈঠক দুই দেশের সম্পর্কে নতুন গতি আনতে পারে, তবে হাসিনার প্রত্যর্পণ ও সংখ্যালঘু নিরাপত্তার মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো কীভাবে সমাধান হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।