বুধবার, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৫| সন্ধ্যা ৭:০৩

মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে অপসংস্কৃতির আগ্রাসন ঠেকাতে হবে

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ৫, ২০২৫ ২:০৫ অপরাহ্ণ
মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে অপসংস্কৃতির আগ্রাসন ঠেকাতে হবে

মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে অপসংস্কৃতির আগ্রাসন ঠেকাতে হবে

বাংলা নববর্ষ আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণের উৎসবে মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে একটি আয়োজন হয়ে থাকে। এই শোভাযাত্রায় দেখা যায় দানব, সরীসৃপ, হাতি, ঘোড়া, বাঘ, ভালুক, লক্ষ্মীপ্যাঁচা, হুতুমপ্যাঁচার মুখোশ আর মানুষের মুখোশ। এমনকি নারীর অঙ্গ-প্রতিকৃতির অশ্লীল ও নগ্ন প্রদর্শনীও থাকে। আয়োজকরা বলেন, এসব মুখোশ আর প্রতিকৃতি অমঙ্গল দূর করে মঙ্গল নিয়ে আসে। কিন্তু এই বিশ্বাস কি সত্যিই বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতির অংশ? আনন্দবাজার পত্রিকা তো এটাকে পূজামণ্ডপের সঙ্গে তুলনা করেছে।

পত্রিকার সাংবাদিক দেবদূত ঘোষ ঠাকুর লিখেছেন, “ঢাকার পহেলা বৈশাখ যেন কলকাতার একডালিয়ার অষ্টমী। কখনো মনে হয় কলেজ স্কোয়ারের পূজামণ্ডপ, কখনো শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসব। রমনার বটমূলে বৃন্দগান হোক বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজপথে মঙ্গল শোভাযাত্রা—সবই একই রকম।” কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বর্ষবরণ কি এভাবেই হওয়ার কথা? এটা কি আমাদের আসল সংস্কৃতি?

বাংলার হাজার বছরের সংস্কৃতি কী? ইতিহাস বলে, এটা গ্রামবাংলার সংস্কৃতি। লোকগীতি, পল্লিগীতি, ভাটিয়ালি, নদীর গান, রাখালের বাঁশি, জারিসারি, নবান্নের পিঠে, কৃষকের লাঙল, কুটিরশিল্প, শীতের কুয়াশায় খেজুর রসের ভাপা পিঠা, নকশিকাঁথা, জসীমউদ্দীনের কবিতায় গ্রামের সৌন্দর্য, জীবনানন্দের রূপসী বাংলা, নজরুলের দ্রোহ আর মধুসূদনের দেশপ্রেম—এগুলোই আমাদের সংস্কৃতি। বছরের প্রথম দিনে গ্রামে গম্ভীরা, লোকগীতি, রবীন্দ্র-নজরুলের গান, নাচ, কবিতা, হাডুডু, মেলা, নাগরদোলা আর হালখাতার আনন্দই ছিল বর্ষবরণ। তাহলে মঙ্গল শোভাযাত্রা কবে থেকে আমাদের ঐতিহ্য হলো?

মঙ্গল শোভাযাত্রার শুরু হয় ১৯৮৫ সালে যশোরে। এর আগে ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এটির নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। ১৯৮৯ সালে ঢাকায় এটি চালু হয়। বিবিসি বাংলা জানায়, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ঐক্য আর শান্তির প্রতীক হিসেবে চারুকলার ছাত্ররা এটি শুরু করেন। শিল্পী তরুণ ঘোষ এতে বড় ভূমিকা রাখেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের বরোদার আর্ট ইনস্টিটিউট থেকে ফোক মোটিফ আর মুখোশের ধারণা আনেন। পরে এটি ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম পায়। এখন এতে গণেশ, রাক্ষস, অসুর আর অশ্লীল প্রতিকৃতি দেখা যায়। কিন্তু এটাকে কীভাবে হাজার বছরের সংস্কৃতি বলা যায়?

বাংলা নববর্ষের শুরু মোগল আমলে। সম্রাট আকবর তার জ্যোতিষী আমির ফতেহ উল্লাহর পরামর্শে বাংলা সন চালু করেন। পারস্যের ‘নওরোজ’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি এটিকে জাঁকজমকপূর্ণ করেন। ‘মিনা বাজার’ থেকে এসেছে আমাদের বৈশাখী মেলা। এর মূলে মুসলিম ঐতিহ্য থাকলেও এটি সর্বজনীন হয়ে ওঠে। ১৯৬৭ সালে ছায়ানট রমনা বটমূলে এটি শুরু করে। কিন্তু এখন যা দেখি, তা কি সত্যিই সর্বজনীন?

এখন শোভাযাত্রায় হিন্দু দেবদেবী, গণেশ পূজা, অগ্নিনৃত্য, আর অশ্লীলতা দেখা যায়। এগুলো কি মুসলিম বাঙালির সংস্কৃতি? আমাদের ঐতিহ্য শালীনতা আর পর্দার। ১০০ বছর আগে কোনো বাঙালি নারী কি পরপুরুষের সঙ্গে এমন উৎসবে মিশতেন? আমরা ভাষায় বাঙালি, কিন্তু বিশ্বাসে মুসলমান। ইসলামে পৌত্তলিকতা হারাম। তাহলে এই শোভাযাত্রা আমাদের কীভাবে প্রতিনিধিত্ব করে?

এটি সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির পরিবর্তে হিন্দুয়ানি আর পাশ্চাত্যের ছোঁয়া ঢুকছে। যুবসমাজ বিভ্রান্ত হচ্ছে। আমাদের ইসলামি ঐতিহ্য রক্ষা না করলে সংস্কৃতি হারিয়ে যাবে। শেকড়ের সন্ধানে তরুণদের জাগাতে হবে। এই অপসংস্কৃতি ঠেকাতে নিজস্ব সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করতে হবে। আমাদের পরিচয় মুসলমান হিসেবে বাঁচিয়ে রাখতে এখনই সোচ্চার হওয়া দরকার।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি