শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সন্ধ্যা ৭:২৪

স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে তুলে নিয়ে যুবলীগ নেতার নির্যাতন

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ৫, ২০২৫ ১:৪৫ অপরাহ্ণ
স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে তুলে নিয়ে যুবলীগ নেতার নির্যাতন

স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে তুলে নিয়ে যুবলীগ নেতার নির্যাতন

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নাসিক ৩ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম শাহীনকে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে যুবলীগ নেতা সরল ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাতে সাইনবোর্ড এলাকায় নিজের পরিবহন কাউন্টার থেকে শাহীনকে প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে সরল, তার ভাই নিশাদ এবং ঢাকা মহানগর যুবলীগ নেতা হেলাল ফরাজির বিরুদ্ধে।

শুক্রবার দুপুরে শাহীনের বাবা এ ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ৮ জনের নামে মামলা দায়ের করেছেন। ভুক্তভোগী শাহীনের অভিযোগ, তাকে নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। তিনি জানান, “আমি সাইনবোর্ড এলাকায় বাসের টিকিট বিক্রির কাজ করি। সম্প্রতি সেখানে একটি চায়ের দোকান দেওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম। কিন্তু যুবলীগ নেতা সরল ও তার বাহিনী আমার কাছে বারবার ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। তারা বলেছিল, চাঁদা না দিলে এখানে ব্যবসা করতে দেবে না। আমি অস্বীকার করায় তারা আমাকে হুমকি দেয়।”

শাহীনের বর্ণনায়, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে সরল, নিশাদ, হেলালসহ ৪-৫ জন সন্ত্রাসী তার টিকিট কাউন্টারে হানা দেয়। “তারা আমাকে টেনেহিঁচড়ে একটি প্রাইভেটকারে তুলে নেয়। এরপর মিতালী মার্কেটের এক নম্বর ভবনে তাদের টর্চার সেলে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে মারধর করা হয়। আমি বাঁচতে সরলের পা ধরে কাকুতি-মিনতি করি। একপর্যায়ে দুই-তিন দিনের মধ্যে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে তারা আমাকে ছেড়ে দেয়।” শাহীনের কথায়, রাত ১টার দিকে তাকে পিডিকে পাম্প এলাকায় ফেলে রেখে চলে যায়।

এলাকাবাসী জানান, সরলের বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে ফতুল্লায় ছাত্র হত্যা মামলার আসামি তিনি। হাসিনা সরকারের আমলে সরল সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়ার ক্যাডার হিসেবে কাজ করতেন। স্থানীয় একজন বলেন, “সরল এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি আর সন্ত্রাসের রাজত্ব চালিয়ে আসছে। এবার শাহীনের ওপর হামলা তার আরেকটি নমুনা।”

শাহীন আরও জানান, “নির্যাতনের সময় তারা আমার হাতে দেশীয় অস্ত্র ধরিয়ে ভিডিও করে। হুমকি দেয়, এ নিয়ে মুখ খুললে আমাকে ছিনতাইকারী বানিয়ে দেবে। আমি প্রাণে বাঁচতে তাদের শর্তে রাজি হই।” এ ঘটনায় শাহীনের পরিবারে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তার বাবা বলেন, “আমার ছেলেকে প্রায় মেরে ফেলেছিল। আমি ন্যায়বিচার চাই।”

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহিনুর আলম বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই আমরা ঘটনাস্থলে যাই। তবে অভিযুক্তদের কাউকে পাইনি। তারা পালিয়ে গেছে। শুক্রবার মামলা দায়ের হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান চলছে।” পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সরল ও তার বাহিনী এখন গা-ঢাকা দিয়েছে। তার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

এলাকাবাসীর মতে, সরলের এমন কর্মকাণ্ড নতুন নয়। একজন বাসিন্দা বলেন, “সে এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি আর নির্যাতন চালিয়ে আসছে। এবার শাহীনের মতো একজন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার ওপর হামলা করল। এর শেষ কোথায়?” ঘটনাটি এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।

শাহীনের পরিবার এখন আতঙ্কে। তিনি বলেন, “আমি শুধু ব্যবসা করে সংসার চালাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এভাবে আমার ওপর হামলা হবে ভাবিনি। আমি বিচার চাই।” পুলিশ বলছে, তদন্ত চলছে। আসামিদের ধরতে তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি