গাজায় নিহত আরও প্রায় ৮০, জাতিসংঘের ক্লিনিকে হামলায় মৃত ২২
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলার তাণ্ডব থামছেই না। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রায় ৮০ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে। সেখানে জাতিসংঘের একটি ক্লিনিকে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন। এই হামলার পর গাজায় নিহতের মোট সংখ্যা ৫০ হাজার ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে। আজ বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল, এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
আল জাজিরার প্রতিবেদন বলছে, বুধবার ভোর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় তীব্র হামলা শুরু করে। দিনের শুরুতে কমপক্ষে ৭৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু রাত গড়াতেই হামলা আরও জোরদার হয়। রাতভর চলা এই আক্রমণে আরও বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর এসেছে। এর মধ্যে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর একটি স্বাস্থ্য ক্লিনিকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। এতে ২২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ৯ জন শিশু ছিল বলে জানিয়েছে একটি মেডিকেল সূত্র। এই ক্লিনিকে শত শত বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলার পর ক্লিনিকে ভয়াবহ আগুন লেগে যায়। এতে অনেকের লাশ পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। চারদিকে আগুন আর ধোঁয়া। চিৎকার আর কান্নার শব্দ ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছিল না।” গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এই হামলাকে “পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধাপরাধ” বলে অভিহিত করেছে। তারা জানায়, নিহতদের মধ্যে নারী, শিশু এবং বয়স্ক মানুষও রয়েছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামলার দায় স্বীকার করেছে। তবে তারা কোনো প্রমাণ ছাড়াই দাবি করেছে, হামাস সদস্যরা এই ক্লিনিকে কাজ করছিল। এক সামরিক বিবৃতিতে বলা হয়, “হামাসের জাবালিয়া ব্যাটালিয়ন এই ভবনটি ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণের জন্য ব্যবহার করছিল।” হামাস এই অভিযোগকে “মিথ্যাচার” বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলছে, “এই ক্লিনিকে শুধু বেসামরিক নাগরিকরাই ছিলেন। এখানে কোনো সামরিক কার্যক্রম ছিল না। ইসরায়েল এই অপরাধকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য মিথ্যা বলছে।” হামাসের এক বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “এই হামলা নেতানিয়াহু সরকারের মানবিক ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অবজ্ঞার প্রমাণ।”
এদিকে, ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় বলছে, “গণহত্যা, বাস্তুচ্যুতি এবং দখলদারিত্ব বন্ধ করতে হবে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এই সংকটের রাজনৈতিক সমাধান জরুরি।”
গাজার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বুধবার সকাল থেকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা জুড়ে বিমান হামলা জোরদার করেছে। পৃথক পৃথক হামলায় আরও ২১ জন নিহত হয়েছেন। এর আগে ২০২৩ সালের অক্টোবরে একই ক্লিনিকে ইসরায়েলি হামলা হয়েছিল। স্থানীয়রা বলছেন, “আমাদের আর নিরাপদ কোনো জায়গা নেই। হাসপাতাল, ক্লিনিক, এমনকি তাঁবুও এখন লক্ষ্যবস্তু।”