তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টকে ‘পরজীবী’ আখ্যা চীনের, শুরু সামরিক মহড়া
চীন তাইওয়ানকে ঘিরে বড় ধরনের সামরিক মহড়া শুরু করেছে। এই মহড়ায় দেশটির সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, এবং রকেট বাহিনী একযোগে অংশ নিয়েছে। এর পাশাপাশি চীনের সামরিক বাহিনী তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তেকে ‘পরজীবী’ বলে আখ্যা দিয়েছে। এই ঘটনা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাকে আরও চরমে তুলেছে। বার্তাসংস্থা রয়টার্স মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল ২০২৫, এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
চীনের সামরিক বাহিনী মঙ্গলবার সকালে ঘোষণা দেয়, তারা তাইওয়ানের চারপাশে এই যৌথ মহড়া শুরু করেছে। তাদের দাবি, এটি ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা’ এবং ‘শক্তিশালী প্রতিরোধ’ হিসেবে কাজ করবে। চীনের ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড বলছে, “এই মহড়ায় সমুদ্র ও আকাশে যুদ্ধ প্রস্তুতি, গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ, সামুদ্রিক ও স্থল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত, এবং অবরোধ আরোপের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।” তারা তাইওয়ানকে সতর্ক করে বলেছে, “বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কোনো জায়গা দেওয়া হবে না।”
এই উত্তেজনার শুরু গত মাসে। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে বেইজিংকে ‘বিদেশি শত্রু শক্তি’ বলে আখ্যা দেন। এই বক্তব্যের পর থেকেই চীন তাদের সামরিক তৎপরতা বাড়ায়। চীন তাইওয়ানকে নিজেদের একটি প্রদেশ হিসেবে দাবি করে। বেইজিংয়ের দীর্ঘদিনের অবস্থান, তাইওয়ানকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একীভূত করতে হবে—প্রয়োজনে সামরিক শক্তি দিয়েও। এই লক্ষ্যে তারা কখনোই যুদ্ধের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়নি। চীনের সামরিক বাহিনী এমনকি একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে প্রেসিডেন্ট লাইকে কার্টুনের পোকা হিসেবে দেখানো হয়েছে। ভিডিওতে তাকে চপস্টিক দিয়ে ধরে জ্বলন্ত তাইওয়ানের ওপর রাখা হয়েছে—একটি প্রতীকী হুমকি।
তাইওয়ান এই মহড়া ও আখ্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, “চীনের এই কাজ শান্তির পক্ষে সহায়ক নয়। এটা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।” জবাবে তাইওয়ান তাদের সামরিক বিমান ও জাহাজ মোতায়েন করেছে। স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাও সক্রিয় করা হয়েছে। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সোমবার চীনের শানডং বিমানবাহী রণতরী তাইওয়ানের প্রতিক্রিয়াশীল এলাকায় প্রবেশ করে। তারা বলছে, “চীন ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বড় সমস্যা সৃষ্টিকারী হয়ে উঠেছে।”
তাইওয়ানের অবস্থান স্পষ্ট—তারা নিজেদের একটি সার্বভৌম দেশ বলে মনে করে। ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখলের পর তাইওয়ান মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। তখন থেকে তারা নিজস্ব গণতান্ত্রিক সরকারে পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বারবার বলেছেন, “তাইওয়ানের সঙ্গে পুনরেকত্রীকরণ অবশ্যই সম্পন্ন হবে।” তিনি এই লক্ষ্যে সামরিক পথও খোলা রেখেছেন। তাইওয়ান জবাবে বলেছে, “আমাদের ভবিষ্যৎ আমাদের জনগণের হাতে। কেউ আমাদের ওপর জোর খাটাতে পারবে না।”