চুরির অপবাদে শ্রমিকদল নেতাকে পিটিয়ে হত্যা, আটক ৪
লক্ষীপুরে মোবাইল চুরির অপবাদে মো. রাজু নামে একজন শ্রমিকদল নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনা ঘটেছে গত রোববার দিবাগত রাতে, আর সোমবার দুপুরে সদর হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, আর ময়নাতদন্তের পর রাজুর মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নিহত রাজু ছিলেন ৩৫ বছর বয়সী একজন তরুণ নেতা। তিনি চররুহিতা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিকদলের দপ্তর সম্পাদক এবং সবুজের গোজা এলাকার বাসিন্দা। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন ও রেখা বেগম, যিনি একই এলাকার নিজাম উদ্দিনের স্ত্রী। এছাড়া আরও দুজনকে আটক করা হয়েছে, যাদের নাম এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
পুলিশ জানায়, ঘটনাটি ঘটেছে রোববার রাত আড়াইটার দিকে। সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়নের সবুজের গোজা এলাকায় কাজল কোম্পানির ইটভাটার সামনে রাজু গণপিটুনির শিকার হন। অভিযোগ, তিনি কবিরের বাড়িতে ঢুকে মোবাইল চুরি করেছেন। এই অপবাদে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাজুর মা আবেগে ভেঙে পড়ে বলেন, “আমার ছেলের মোবাইলে চার্জ ছিল না। তাই সে তার ভাতিজা কবিরের ঘরে গিয়ে মোবাইল চার্জে দেয়। এরপর কবির লোকজন ডেকে এনে রাজুকে পিটিয়ে মারে।” তিনি অভিযোগ করেন, “তার শরীরে টেঁটা আর ইট দিয়ে বারবার আঘাত করা হয়েছে। এমনকি তার চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টাও করেছে। এত নৃশংসভাবে আমার ছেলেকে মেরেছে, এটা কোনো মানুষের কাজ নয়।” তার কথায় ফুটে ওঠে একজন মায়ের অসহায় কান্না।
সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল মোন্নাফ বলেন, “চুরির অপবাদে রাজুকে গণপিটুনি দেওয়া হয়, যাতে তার মৃত্যু হয়। আমরা কবির হোসেন ও রেখা বেগমসহ চারজনকে আটক করেছি। কবির ও রেখার নামে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। বাকি দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।” তিনি জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে, এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চররুহিতা ইউনিয়ন শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন এই হত্যাকাণ্ডে গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “রাজু চুরির সঙ্গে জড়িত ছিল না। এটা পরিকল্পিত হত্যা হতে পারে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাই।” তার কথায় দলের মধ্যে ক্ষোভ আর হতাশার ছায়া স্পষ্ট।
পুলিশ এখন ঘটনার পেছনের পূর্ণ সত্য উদঘাটনে কাজ করছে। আটক চারজনের জিজ্ঞাসাবাদে আরও তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে। এই নৃশংসতা এলাকায় শোকের ছায়া ফেলেছে। রাজুর পরিবার এখন ন্যায়বিচারের অপেক্ষায়।