শনিবার, ৭ই জুন, ২০২৫| বিকাল ৪:০৫

চুরির অপবাদে শ্রমিকদল নেতাকে পিটিয়ে হত্যা, আটক ৪

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ১, ২০২৫ ৩:৩৬ অপরাহ্ণ
চুরির অপবাদে শ্রমিকদল নেতাকে পিটিয়ে হত্যা, আটক ৪

চুরির অপবাদে শ্রমিকদল নেতাকে পিটিয়ে হত্যা, আটক ৪

লক্ষীপুরে মোবাইল চুরির অপবাদে মো. রাজু নামে একজন শ্রমিকদল নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনা ঘটেছে গত রোববার দিবাগত রাতে, আর সোমবার দুপুরে সদর হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, আর ময়নাতদন্তের পর রাজুর মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

নিহত রাজু ছিলেন ৩৫ বছর বয়সী একজন তরুণ নেতা। তিনি চররুহিতা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিকদলের দপ্তর সম্পাদক এবং সবুজের গোজা এলাকার বাসিন্দা। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন ও রেখা বেগম, যিনি একই এলাকার নিজাম উদ্দিনের স্ত্রী। এছাড়া আরও দুজনকে আটক করা হয়েছে, যাদের নাম এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

পুলিশ জানায়, ঘটনাটি ঘটেছে রোববার রাত আড়াইটার দিকে। সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়নের সবুজের গোজা এলাকায় কাজল কোম্পানির ইটভাটার সামনে রাজু গণপিটুনির শিকার হন। অভিযোগ, তিনি কবিরের বাড়িতে ঢুকে মোবাইল চুরি করেছেন। এই অপবাদে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রাজুর মা আবেগে ভেঙে পড়ে বলেন, “আমার ছেলের মোবাইলে চার্জ ছিল না। তাই সে তার ভাতিজা কবিরের ঘরে গিয়ে মোবাইল চার্জে দেয়। এরপর কবির লোকজন ডেকে এনে রাজুকে পিটিয়ে মারে।” তিনি অভিযোগ করেন, “তার শরীরে টেঁটা আর ইট দিয়ে বারবার আঘাত করা হয়েছে। এমনকি তার চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টাও করেছে। এত নৃশংসভাবে আমার ছেলেকে মেরেছে, এটা কোনো মানুষের কাজ নয়।” তার কথায় ফুটে ওঠে একজন মায়ের অসহায় কান্না।

সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল মোন্নাফ বলেন, “চুরির অপবাদে রাজুকে গণপিটুনি দেওয়া হয়, যাতে তার মৃত্যু হয়। আমরা কবির হোসেন ও রেখা বেগমসহ চারজনকে আটক করেছি। কবির ও রেখার নামে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। বাকি দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।” তিনি জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে, এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চররুহিতা ইউনিয়ন শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন এই হত্যাকাণ্ডে গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “রাজু চুরির সঙ্গে জড়িত ছিল না। এটা পরিকল্পিত হত্যা হতে পারে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাই।” তার কথায় দলের মধ্যে ক্ষোভ আর হতাশার ছায়া স্পষ্ট।

পুলিশ এখন ঘটনার পেছনের পূর্ণ সত্য উদঘাটনে কাজ করছে। আটক চারজনের জিজ্ঞাসাবাদে আরও তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে। এই নৃশংসতা এলাকায় শোকের ছায়া ফেলেছে। রাজুর পরিবার এখন ন্যায়বিচারের অপেক্ষায়।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত
ট্রাস্ট ব্যাংকে বিভিন্ন পদে চাকরি, আবেদন স্নাতকেই

ট্রাস্ট ব্যাংকে বিভিন্ন পদে চাকরি, আবেদন স্নাতকেই

বিএসএমএমইউতে চার অপরিণত নবজাতকের সফল জন্ম

ইতিহাসের এই দিনে (৬ জুন, ২০২৫)

ইতিহাসের এই দিনে (১০ জানুয়ারি, ২০২৫)

৪১ দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছেন ট্রাম্প

৪১ দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছেন ট্রাম্প

হাসিনাকে ফেরত দিতে ভারত বাধ্য : তুর্কি গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ

হাসিনাকে ফেরত দিতে ভারত বাধ্য : তুর্কি গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ

হামাসের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠক, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের এজেন্ট নয় - ট্রাম্পের দূত

হামাসের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠক, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের এজেন্ট নয় – ট্রাম্পের দূত

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু নিয়ে আসিফ নজরুলের মন্তব্য

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু নিয়ে আসিফ নজরুলের মন্তব্য

ইতিহাসের এই দিনে (৬ জুন, ২০২৫)

ইতিহাসের এই দিনে (৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫)

এক ফেব্রুয়ারি থেকে কক্সবাজার রুটে নতুন দুটি ট্রেন চালু

এক ফেব্রুয়ারি থেকে কক্সবাজার রুটে নতুন দুটি ট্রেন চালু

অর্থনীতির সংকট কাটিয়ে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট: বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ গত বছরের জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার এক বছর পূর্ণ করতে চললেও দেশের অর্থনীতি এখনও স্থবিরতার মধ্যেই রয়েছে। মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগে স্থবিরতা, কর্মসংস্থান সংকট, রফতানি হ্রাস ও রাজস্ব ঘাটতির মতো বহু সমস্যা সামনে রেখে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। বাজেট প্রস্তুতের আগে অর্থ মন্ত্রণালয় যে আটটি প্রধান চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে, তার মধ্যে রয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা, সামাজিক নিরাপত্তা বাড়ানো, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন এবং এলডিসি উত্তরণে প্রস্তুতি। অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। একইসঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে উপকারভোগীর সংখ্যা ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনাও থাকছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর ওপর যে চাপ তৈরি হয়েছে, তা সামাল দিতে কেবল সামাজিক সুরক্ষা বাড়ানোই যথেষ্ট নয়। নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ না থাকায় দেশের শিল্প খাতেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানিতে এলসি খোলার হার ৩০ শতাংশ কমেছে। শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ নেমে এসেছে ৪৮.৪১ শতাংশে এবং দেশে বর্তমানে বেকার সংখ্যা ২৭ লাখ ৩০ হাজার, যা এক বছরে বেড়েছে সোয়া তিন লাখ। বিদেশে কর্মী পাঠানোর হারও ২২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তবে আশার কথা হলো—রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়েছে এবং মার্চ ও এপ্রিল মাসে তা রেকর্ড পরিমাণে পৌঁছেছে। এদিকে বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় সরকারের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্য ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এনবিআর মাত্র ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে পেরেছে, ফলে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সরকার নতুন খাতে কর আরোপ এবং কর ব্যবস্থার অটোমেশন চালুর মাধ্যমে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর চেষ্টা করছে। সরকারি ঋণের পরিমাণ এরইমধ্যে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। নতুন বাজেট বাস্তবায়নে আরও ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যার মধ্যে সুদ পরিশোধেই ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। তবে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা কিছুটা কমিয়ে বাজেট ঘাটতি সীমিত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, উচ্চাভিলাষী এই বাজেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা। বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের মতে, বাজেটের আকার আরও ছোট ও বাস্তবসম্মত হলে তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হতো। সিপিডির মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, বাজেটের মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা এবং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বৈদেশিক বাণিজ্যেও নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক, ভারতের পণ্যে নিষেধাজ্ঞা এবং বৈশ্বিক বাজারের অস্থিরতায় রফতানি কমেছে। আখাউড়া স্থলবন্দরের মতো সীমান্ত বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পথগুলোর কার্যকারিতা কমে গেছে। এছাড়া, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং চাঁদাবাজি ও সাইবার হুমকির কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এমন অবস্থায় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বিনিয়োগ সুরক্ষায় ‘ফাস্ট-ট্র্যাক অভিযোগ নিষ্পত্তি’ এবং ‘ই-কমার্স নিরাপত্তা ইউনিট’ গঠনের আহ্বান জানিয়েছে। এই সব বাস্তবতায় সরকারের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ তৈরি ও তার কার্যকর বাস্তবায়ন, যার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে গতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

অর্থনীতির সংকট কাটিয়ে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট: বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ