শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| রাত ৯:০৯

নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত ‘জেল বন্দি’ ইমরান খান

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ৩০, ২০২৫ ৫:৪৮ অপরাহ্ণ
নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত ‘জেল বন্দি’ ইমরান খান

নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত ‘জেল বন্দি’ ইমরান খান

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। এই মনোনয়ন এসেছে নরওয়ের একটি রাজনৈতিক দল ‘পার্টিয়েট সেন্ট্রাম’-এর সঙ্গে যুক্ত পাকিস্তান ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স (পিডব্লিউএ) নামে একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে। ইমরান খান, যিনি বর্তমানে জেলে বন্দি, তার মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য অবিচল প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে এই মনোনয়ন পেয়েছেন। এই ঘোষণা এসেছে গত শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫ তারিখে।

ইমরান খানের রাজনৈতিক জীবন একটি ঝড়ো পথের গল্প। ২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি দেশের জন্য অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। কিন্তু ২০২২ সালে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তারপর থেকে তিনি একের পর এক আইনি মামলার মুখোমুখি হয়েছেন। ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। এ বছরের জানুয়ারিতে তাকে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এটি তার বিরুদ্ধে চতুর্থ বড় রায়। তবে ইমরান ও তার দল পিটিআই এসব অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছে।

এই মনোনয়ন নিয়ে পিটিআই-এর অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্টে বলা হয়, “ইমরান খানের এই মনোনয়ন তার শান্তি, গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের জন্য ২৮ বছরের অক্লান্ত লড়াইয়ের স্বীকৃতি।” পার্টিয়েট সেন্ট্রামের একজন প্রতিনিধি ভিডিও বার্তায় বলেন, “ইমরান খানকে আমরা মনোনীত করেছি তার পাকিস্তানে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য কাজের জন্য। তাকে শুভকামনা জানাই।” এই ঘোষণা পাকিস্তানে এবং আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এটি ইমরান খানের প্রথম মনোনয়ন নয়। ২০১৯ সালেও তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। সেবার তার মনোনয়নের কারণ ছিল দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা, বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে তার ভূমিকা। ২০১৯ সালে ভারতীয় বিমান বাহিনীর পাইলট অভিনন্দন বর্ধমানকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তকে শান্তির একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়েছিল। পাকিস্তানের সংসদে একটি প্রস্তাবও পাস করা হয়েছিল তার মনোনয়নের সমর্থনে। তবে ইমরান তখন বলেছিলেন, “আমি এই পুরস্কারের যোগ্য নই। যিনি কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করবেন, তিনিই এর প্রকৃত দাবিদার।”

এবারের মনোনয়ন তার বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও আলোকিত করেছে। জেলে থেকেও তিনি তার দল ও সমর্থকদের মাঝে প্রেরণার উৎস। সম্প্রতি টাইম ম্যাগাজিনে একটি নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, “আমি একটি নিভৃত কক্ষে বন্দি, কিন্তু পাকিস্তানের মানুষের ন্যায়বিচারের প্রতি বিশ্বাসে আমি অটল।” তিনি দেশে গণতন্ত্রের অবনতি ও তার দলের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ তুলেছেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও পাকিস্তানে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে।

নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য প্রতি বছর শত শত মনোনয়ন জমা পড়ে। নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি আট মাসের একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিজয়ী নির্বাচন করে। এ বছর ৩৩৮টি মনোনয়ন জমা পড়েছে, যার মধ্যে ২৪৪টি ব্যক্তি এবং ৯৪টি সংগঠন। ইমরান খান কি এবার এই পুরস্কার জিতবেন, তা এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে তার সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহের কমতি নেই।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি