শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| রাত ৯:০৪

যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজে হুথিদের হামলা, ট্রাম্প বললেন ‘শান্তির জন্য মরছে তারা’

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ২৭, ২০২৫ ৫:৫৭ অপরাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজে হুথিদের হামলা, ট্রাম্প বললেন ‘শান্তির জন্য মরছে তারা’

লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজের ওপর হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। তারা দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএস হ্যারি ট্রুম্যান যুদ্ধজাহাজেও আঘাত হেনেছে তাদের যোদ্ধারা। একইসঙ্গে ইসরায়েলের তেলআবিবের একাধিক সামরিক স্থাপনায় ড্রোন হামলার কথাও স্বীকার করেছে তারা। হুথিদের এক মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের জবাব তারা আরও কঠোরভাবে দেবে এবং ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত লোহিত সাগরে ইসরায়েলি জাহাজ চলাচলে বাধা সৃষ্টি অব্যাহত থাকবে।

হুথিদের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করেছে। মার্কিন বাহিনী ইয়েমেনের রাজধানী সানাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে। হুতি-সংশ্লিষ্ট টেলিভিশন চ্যানেল আল মাসিরাহ জানিয়েছে, সা’দা প্রদেশের আল সালেম এলাকায়ও হামলা চালানো হয়েছে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সা’দা প্রদেশে অন্তত ১৭ বার বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি মন্তব্য নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। হুথিদের বিরুদ্ধে মার্কিন হামলার ফলাফলকে “অবিশ্বাস্য” বলে অভিহিত করেছেন তিনি। তিনি দাবি করেছেন, হুথিরা শান্তির জন্য মরছে, কারণ তাদের ওপর ভয়াবহ হামলা চলছে। হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “হুথিরা প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাই তারা এখন শান্তি আলোচনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।”

তবে হুথিরা এই দাবি নাকচ করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র যতই হামলা করুক, তারা লোহিত সাগরে ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জাহাজ চলাচল বন্ধের অভিযান থেকে সরে আসবে না। সংগঠনটির সুপ্রিম পলিটিক্যাল কাউন্সিলের প্রধান মাহদী আল-মাশাত স্পষ্টভাবে বলেছেন, “ইয়েমেনকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করার যে কোনো প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত আছি, কিন্তু আমাদের অবস্থান বদলাবে না।”

এদিকে, হুথিরা দাবি করেছে, তারা ইসরায়েলের ওপর হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। যদিও ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দেয়নি। তবে বিশ্লেষকদের মতে, হুথিদের সামরিক সক্ষমতা দিন দিন বাড়ছে এবং তাদের আক্রমণ ইসরায়েলের জন্য একটি নতুন ধরনের হুমকি তৈরি করছে।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হুথিদের লাগাতার হামলার কারণে লোহিত সাগর হয়ে পণ্য পরিবহন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের একটি ভুলের কারণে ইয়েমেনে মার্কিন সামরিক হামলার পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঘটনাও বেশ আলোচিত হচ্ছে। একটি গোপন গ্রুপ চ্যাটে তিনি ভুলবশত এক সাংবাদিককে যুক্ত করায় আগেভাগেই হামলার তথ্য ফাঁস হয়ে যায়।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, লোহিত সাগর এবং মধ্যপ্রাচ্যে চলমান এই উত্তেজনা খুব সহজে থামার কোনো সম্ভাবনা নেই। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের ফলে পুরো অঞ্চলটি ক্রমশ যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে। হুথিদের লক্ষ্য এখন স্পষ্ট—যতদিন গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন চলবে, ততদিন তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখবে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও তাদের সামরিক শক্তি দিয়ে হুথিদের দমন করতে মরিয়া।

এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন লোহিত সাগরের দিকে। কারণ, এই জলপথে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল ব্যাহত হওয়া বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই সংঘাত কতদূর গড়াবে এবং শেষ পর্যন্ত এটি বিশ্বশান্তির জন্য কী ধরনের হুমকি সৃষ্টি করবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি