৩ বছরে ইউক্রেনে নিহত ১২ হাজার ৮ শতাধিক বেসামরিক: জাতিসংঘ
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর গত তিন বছরে ১২ হাজার ৮০০-এর বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ তিন বছর পূর্ণ করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। এই সময়ে আহত হয়েছেন আরও ৩০ হাজারের বেশি মানুষ, যাদের অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু ও নারী রয়েছেন। ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, বিমান হামলা এবং গোলাবর্ষণে বেসামরিক অঞ্চলগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহরগুলো যেমন ডোনেটস্ক, লুহানস্ক এবং দক্ষিণের মারিউপোল ও খেরসনে প্রাণহানি সবচেয়ে বেশি। জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল জয়েস মসুয়া বলেন, “এই যুদ্ধে মানুষের দুর্ভোগ অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রতিদিনই নতুন করে প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞের খবর আসছে।”
এই সংঘাতের ফলে ইউক্রেনে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এর মধ্যে ৬০ লাখের বেশি মানুষ দেশের বাইরে আশ্রয় নিয়েছেন, এবং বাকিরা দেশের অভ্যন্তরে স্থানান্তরিত হয়েছেন। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানিয়েছে, এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট। বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে অনেকেই তাদের ঘরবাড়ি, জীবিকা এবং পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন।
ইউক্রেনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার হামলায় দেশটির অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হাসপাতাল, স্কুল, এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘের হিসেবে, এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ২৫ হাজারের বেশি বেসামরিক ভবনে আঘাত হেনেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, “রাশিয়া শুধু আমাদের ভূমি নয়, আমাদের জনগণের জীবনও ধ্বংস করছে। আমরা এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব।”
বিশ্ব সম্প্রদায় এই যুদ্ধের নিন্দা জানালেও, রাশিয়া তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একাধিকবার শান্তি প্রস্তাব উত্থাপিত হলেও, রাশিয়ার ভেটোর কারণে তা ব্যর্থ হয়েছে। এদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, তারা শুধু সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাচ্ছে। তবে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বেসামরিক এলাকায় হামলার প্রমাণ স্পষ্ট।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে এবং এর প্রভাব বৈশ্বিক অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তার ওপর পড়বে। জাতিসংঘ মানবিক সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে, তবে তহবিলের ঘাটতি এই প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের জনগণের দুর্দশা কমানো এখন বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।