বাংলাদেশ ও ড. ইউনূসকে শুভেচ্ছা ট্রাম্পের, সম্পর্ক জোরদারের বার্তা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের ৫৪তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেশটির জনগণ ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ২৬ মার্চ ২০২৫, বুধবার প্রকাশিত এক চিঠিতে ট্রাম্প এই শুভেচ্ছা বার্তার পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। এই বার্তা বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নতুন আশার সঞ্চার করেছে, বিশেষ করে এমন এক সময়ে যখন দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও গভীর করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে।
ট্রাম্প তার চিঠিতে লিখেছেন, “আমেরিকান জনগণের পক্ষ থেকে, আমি আপনাকে এবং বাংলাদেশের জনগণকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই পরিবর্তনের সময়ে বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং উন্নত নিরাপত্তার সুযোগ রয়েছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “যুক্তরাষ্ট্র আগামী বছরগুলোতে এই অংশীদারিত্ব অব্যাহত রাখতে এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আঞ্চলিক নিরাপত্তা প্রচারে একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।” এই বক্তব্যে তিনি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গভীরতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ওপর জোর দিয়েছেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এই শুভেচ্ছা বার্তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ইতিমধ্যে ট্রাম্পকে তার নির্বাচনী জয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। আমরা বিশ্বাস করি, দুই দেশ নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতার পথ খুঁজে পাবে।” এই বার্তা প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, ট্রাম্পের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ড. ইউনূসের প্রশাসনও এই শুভেচ্ছাকে স্বাগত জানিয়েছে। তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “আমরা ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে আশা করছি।” তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে রয়েছে, এবং ট্রাম্পের প্রশাসন এই প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করবে বলে তারা আশাবাদী। এই প্রেক্ষাপটে, ট্রাম্পের পূর্ববর্তী মেয়াদে দুই দেশের সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধির কথাও স্মরণ করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি, যা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বড় ভূমিকা রাখে, এই সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে আরও উপকৃত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা, এবং ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির সম্ভাবনা অর্থনীতিতে নতুন গতি আনতে পারে। তবে কেউ কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, ট্রাম্পের সুরক্ষাবাদী নীতি বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
এই শুভেচ্ছা বার্তার পেছনে রাজনৈতিক তাৎপর্যও লক্ষণীয়। ট্রাম্প গত অক্টোবরে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার সমালোচনা করেছিলেন। তবে তার সাম্প্রতিক বার্তায় সেই বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই, যা সম্পর্ক স্বাভাবিক করার একটি ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। ড. ইউনূসও পূর্বে ট্রাম্পের নির্বাচনী জয়ের পর একটি চিঠিতে শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমাদের সম্পর্ক কোনো নির্দিষ্ট সরকারের ওপর নির্ভর করে না। ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গেও আমরা সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে যাব।” এই ঘটনা এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একটি উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে।
ট্রাম্পের এই শুভেচ্ছা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে এটিকে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখছেন। আগামী দিনে এই সম্পর্ক কীভাবে গড়ে ওঠে, তা এখন সময়ের ওপর নির্ভর করছে।