গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বৈঠক
গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘাত ও যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এর মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) আমিরাত ভিত্তিক বার্তাসংস্থা ওয়াম এর তথ্য অনুযায়ী, এই বৈঠক গাজায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং মানবিক সংকট মোকাবিলায় একটি সমন্বিত কৌশল নির্ধারণের লক্ষ্যে আয়োজিত হয়েছে। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ইউএই-এর পক্ষে শীর্ষ কূটনীতিকরা অংশ নিয়েছেন। এই আলোচনা গাজার বর্তমান পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার প্রচেষ্টাকে নতুন গতি দেওয়ার প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।
গত বছরের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাতে গাজায় ব্যাপক প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এই সংঘাতের মধ্যে যুদ্ধবিরতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় একাধিকবার আলোচনা হয়েছে, তবে স্থায়ী সমাধান এখনও অধরা। এবার ইউএই-এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠকটি গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়ানো এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়নের সম্ভাবনা নিয়ে আলোকপাত করেছে।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের দূত স্টিভ উইটকফ গাজায় ৫০ দিনের যুদ্ধবিরতির একটি নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। এই প্রস্তাবে হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বৃদ্ধির শর্ত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইউএই-এর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এবং গাজার পুনর্গঠন ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তি নিশ্চিত করতে আরব দেশগুলোর সমন্বিত ভূমিকার ওপর জোর দিয়েছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাত, যারা ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে, এই সংকটে একটি মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা পালন করতে আগ্রহী বলে জানা গেছে।
ইউএই-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠা না হলে মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা আসবে না। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে এই সংকট সমাধানে কাজ করতে চাই।” বৈঠকে গাজার পুনর্গঠনের জন্য আর্থিক সহায়তা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য মানবিক করিডোর তৈরির বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা হামাসের সঙ্গে গোপন আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে জিম্মিদের মুক্তি ও যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা যায়।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতির প্রতি পূর্ণ সমর্থন দিতে দ্বিধাগ্রস্ত, কারণ তাঁর সরকারের কট্টরপন্থি মিত্ররা এই চুক্তির বিরোধিতা করছেন। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ইসরায়েল কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইউএই-এর সঙ্গে এই বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের অংশ, যাতে আরব বিশ্বের সমর্থন নিয়ে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ানো যায়।
গাজায় চলমান সংকটে হাসপাতালগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত, খাদ্য ও পানির সংকট চরমে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, ২০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত। এই বৈঠকের ফলাফল গাজার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।