তুরস্ক ছাড়া ইউরোপীয় নিরাপত্তা ‘অসম্ভব’: প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যে বলেছেন, তুরস্কের অংশগ্রহণ ছাড়া ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কার্যত অসম্ভব। তিনি এই মন্তব্যের পাশাপাশি ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ককে আরও গভীর ও ইতিবাচকভাবে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেছেন। গত সোমবার (২৪ মার্চ) রাতে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় মন্ত্রিসভার এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা আনাদোলু এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তার বক্তৃতায় জোর দিয়ে বলেন, “গত কয়েক সপ্তাহে ইউরোপে চলা তীব্র বিতর্ক এবং ঘটনাপ্রবাহ স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তুরস্কের সহযোগিতা ছাড়া ইউরোপীয় নিরাপত্তার ভিত্তি মজবুত করা সম্ভব নয়।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, শুধু নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই নয়, বরং অর্থনীতি, কূটনীতি, বাণিজ্য এবং সামাজিক জীবনের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে তুরস্কের প্রতি ইউরোপের নির্ভরতা এখন সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, “ইউরোপীয় দেশগুলো যখন যুক্তিসঙ্গতভাবে তাদের নীতি প্রণয়ন করে, তখন তারা তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা ও গুরুত্ব বুঝতে পারে। আমরা এটাকে তুরস্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সম্পর্কের ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষেত্রে একটি আশাব্যঞ্জক সূচনা হিসেবে দেখছি।”
এরদোয়ান আরও জানান, তুরস্ক ইউরোপীয় দেশগুলো এবং ইইউর সঙ্গে সম্পর্ককে এমন একটি কাঠামোতে এগিয়ে নিতে প্রস্তুত, যেখানে পারস্পরিক স্বার্থ এবং শ্রদ্ধাবোধ প্রাধান্য পাবে। তিনি বলেন, “আমরা চাই আমাদের ইউরোপীয় বন্ধুদের সঙ্গে একটি সুন্দর ও ফলপ্রসূ সম্পর্ক গড়ে তুলতে। এজন্য আমরা সবসময়ই প্রস্তুত।”
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়েও এরদোয়ান তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেন, তুরস্ক শুরু থেকেই এই সংঘাতের ঘটনাপ্রবাহ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে আসছে এবং নিজেদের অবস্থান সঠিক রেখেছে।
“আমরা বিশ্বাস করি, শান্তির কোনো পরাজয় নেই। তাই প্রতিটি আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমরা শান্তির পক্ষে কথা বলে এসেছি,” বলেন তিনি। এরদোয়ান আরও বলেন, “এই যুদ্ধ যখন চতুর্থ বছরে পা দিয়েছে, তখন আমরা চাই আর কোনো রক্তপাত বা ধ্বংস না হয়ে ন্যায়সঙ্গত শান্তির মাধ্যমে এই সংঘাতের অবসান ঘটুক। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এসেছে, আর রাশিয়া এতে আংশিক ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। আমরা এটাকে শান্তির পথে একটি ছোট, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছি।”
এরদোয়ানের এই বক্তব্য তুরস্কের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব এবং ইউরোপের সঙ্গে তার সম্পর্কের ভবিষ্যৎ গঠনে দেশটির দৃঢ় অবস্থানের প্রতিফলন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।