শুক্রবার, ১৮ই এপ্রিল, ২০২৫| সকাল ৬:১৩

সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ রুটে সাগরপথে ফেরি সার্ভিস চালু

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ২৪, ২০২৫ ৩:৫৩ অপরাহ্ণ
সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ রুটে সাগরপথে ফেরি সার্ভিস চালু

সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ রুটে সাগরপথে ফেরি সার্ভিস চালু

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে সন্দ্বীপ দ্বীপে সরাসরি সাগরপথে ফেরি সার্ভিস চালু হয়েছে, যা বাংলাদেশের নৌ-যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। রোববার (২৩ মার্চ, ২০২৫) সকালে এই সার্ভিসের উদ্বোধন করা হয়েছে, যা দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সন্দ্বীপবাসীদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, যিনি এই উদ্যোগকে “অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের মাইলফলক” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এই ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ায় সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ রুটে যাতায়াতের সময় ও খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই নতুন ফেরি সার্ভিসে প্রথম দিনে ‘এমভি সন্দ্বীপ-১’ নামে একটি আধুনিক ফেরি চালু করা হয়। এই ফেরি একবারে ২৫০ জন যাত্রী এবং ২০টি ছোট যানবাহন পরিবহন করতে সক্ষম। সকাল ৮টায় সীতাকুণ্ডের কুমিরা ঘাট থেকে যাত্রা শুরু করে ফেরিটি প্রায় দেড় ঘণ্টায় সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে পৌঁছায়। পূর্বে সন্দ্বীপে যেতে হলে যাত্রীদের কুমিরা থেকে বাসে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে সেখান থেকে লঞ্চে করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হতো, যা সময় ও অর্থ উভয়ের দিক থেকে ব্যয়বহুল ছিল। এখন এই সরাসরি ফেরি সার্ভিসে যাত্রার সময় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

স্থানীয়রা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। সন্দ্বীপের বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, “আগে চট্টগ্রামে যেতে ৪-৫ ঘণ্টা লাগত। এখন দেড় ঘণ্টায় পৌঁছে যাচ্ছি। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা—সবকিছুতে এটি সুবিধা এনে দেবে।” ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, এই সার্ভিসের ফলে সন্দ্বীপের কৃষিপণ্য, বিশেষ করে সুপারি ও মাছ, দ্রুত ও কম খরচে মূল ভূখণ্ডে পৌঁছাবে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে দিনে দুইবার ফেরি চলাচল করবে—সকাল ৮টায় এবং বিকেল ৩টায়। তবে চাহিদা বাড়লে ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ফেরির ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে যাত্রীপ্রতি ২০০ টাকা এবং যানবাহনের জন্য আকারভেদে ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা। প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এটি সরকারের জনকল্যাণমূলক প্রকল্প। আমরা চাই দ্বীপের মানুষ মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে আরও সংযুক্ত হোক।”

তবে, প্রথম দিনেই কিছু চ্যালেঞ্জ প্রকাশ পেয়েছে। সীতাকুণ্ডের কুমিরা ঘাটে যাত্রীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। এছাড়া, বৈরী আবহাওয়ায় ফেরি চলাচলের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় একজন নৌকার মাঝি বলেন, “বর্ষায় বা ঝড়ে এই পথে ঝুঁকি থাকবে। সরকারের উচিত নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা।” বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদে এই রুটে সফলতা পেতে হলে ঘাটের অবকাঠামো উন্নয়ন ও ফেরির সংখ্যা বাড়ানো জরুরি।

এই ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ায় সন্দ্বীপের প্রায় তিন লাখ বাসিন্দার জীবনে বড় পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকার জানিয়েছে, এটি শুধু সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ রুটে সীমাবদ্ধ থাকবে না, ভবিষ্যতে অন্যান্য দ্বীপের সঙ্গেও এমন সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত