দ. কোরিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ দাবানল, নিহত অন্তত ৪
দক্ষিণ কোরিয়া এখন আগুনের লেলিহান শিখায় জর্জরিত! শনিবার (২২ মার্চ, ২০২৫) থেকে দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলসহ একাধিক প্রদেশে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ দাবানলে অন্তত ৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৩ জন দমকলকর্মী এবং ১ জন সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন। শুষ্ক আবহাওয়া আর প্রচণ্ড বাতাসের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, যা দেশটির ইতিহাসে একটি ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের রূপ নিয়েছে। সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে, আর শত শত মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ গিয়ংসাং প্রদেশের সানচেওং থেকে শুরু হওয়া এই দাবানল বুসান, উলসান এবং উত্তর গিয়ংসাং প্রদেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় সময় ভোরে শুরু হওয়া আগুন মুহূর্তের মধ্যে বিশাল এলাকা গ্রাস করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, “আকাশ কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে, আর আগুনের শিখা পাহাড়ের পর পাহাড় গিলে খাচ্ছে।” বন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, শনিবারই ১৬টি স্থানে দাবানলের খবর পাওয়া গেছে, যা দ্রুত বেড়ে দেশজুড়ে বিস্তার লাভ করেছে।
দমকলকর্মীরা আগুন নেভাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। একজন দমকলকর্মী বলেছিলেন, “আমরা শেষ চেষ্টা করছি, কিন্তু বাতাস এত জোরে যে আগুন আমাদের দিকেই ধেয়ে আসছে।” তিনি কথা শেষ করার আগেই শিখার মুখে পড়ে প্রাণ হারান। সানচেওংয়ে একটি মহাসড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, আর আশপাশের গ্রাম থেকে ৫০০ জনের বেশি বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বুসানে একটি স্কুলও আগুনের হুমকিতে পড়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১২টি শহরে দাবানলের সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেছেন, “এটি আমাদের জন্য একটি জাতীয় সংকট। আমরা সব সংস্থান ব্যবহার করে এটি নিয়ন্ত্রণে আনব।” হেলিকপ্টার, ড্রোন এবং হাজার হাজার দমকলকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে, কিন্তু বাতাসের তীব্রতায় আগুনের বিস্তার থামানো যাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, এই দাবানলের ফলে ব্যাপক সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে, এবং পরিবেশবিদরা আশঙ্কা করছেন, বন্যপ্রাণীরও বড় ক্ষতি হতে পারে। স্থানীয়রা বলছেন, “আমরা এমন ভয়ঙ্কর আগুন আগে কখনো দেখিনি। আমাদের সবকিছু হারানোর ভয় হচ্ছে।” জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শুষ্কতা বৃদ্ধি এই দাবানলের পেছনে অন্যতম কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
এই দুর্যোগে জনজীবন বিপর্যস্ত। বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে অনেক এলাকায়। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আগুনের লেলিহান শিখা কি দক্ষিণ কোরিয়াকে আরও গ্রাস করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণে আসবে—এখন সেটাই প্রশ্ন।