গাজার একাংশ এখনই দখলের নির্দেশ ইসরাইলের
ইসরায়েল ও গাজার মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকেই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল গাজা উপত্যকা দখল করে, যা পরবর্তীতে ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে ২০০৭ সাল থেকে গাজা কার্যত হামাসের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সম্প্রতি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইওভ গ্যালান্ট গাজা উপত্যকায় একটি “সম্পূর্ণ” অবরোধ ঘোষণা দেন। এর ফলে ইসরায়েল গাজার অভ্যন্তরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে এবং খাদ্য ও জ্বালানি প্রবেশে বাধা দেয়। তিনি মন্তব্য করেন যে “আমরা ‘মানব প্রাণীর’ বিরুদ্ধে লড়াই করছি এবং আমরা সেই অনুযায়ী আচরণ করছি।” ইসরায়েলি জ্বালানি মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ পরে বলেন “একটি বিদ্যুতের সুইচ চালু করা হবে না, একটি কলও করতে দেওয়া হবে না, এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের দেশে ফিরে না আসা পর্যন্ত একটি জ্বালানী ট্রাকও প্রবেশ করবে না।” হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই আদেশকে “ঘৃণ্য” বলে অভিহিত করেছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে “যুদ্ধাপরাধ করার দায়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।” আইডিএফ জানায় গাজা উপত্যকার আশেপাশের ১৫টি এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজা শহরসহ ওয়াদি গাজার উত্তরে অবস্থানরত বাসিন্দাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার সতর্কতা জারি করে। তারা বাসিন্দাদের দক্ষিণ গাজার দিকে সরে যেতে নির্দেশ দেয়। উত্তর গাজা থেকে ১১ লাখ বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশকে জাতিসংঘ অসম্ভব বলে অভিহিত করে। জাতিসংঘ একটি বিবৃতিতে গাজায় “বিধ্বংসী মানবিক পরিণতি” সম্পর্কে সতর্ক করে। সরিয়ে নেওয়ার আদেশ জারি হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই, জাতিসংঘসহ সেবা সংস্থাগুলোকে রাফাহতে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এর প্রতিক্রিয়ায় হামাস অথরিটি ফর রিফিউজি অ্যাফেয়ার্স উত্তর গাজার বাসিন্দাদের “নিজের বাড়িতে অবিচল থাকতে এবং দখলদারিত্বের দ্বারা পরিচালিত এই জঘন্য মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের মুখে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে” আহ্বান করে। ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস একটি বিবৃতি জারি করে বলে যে, সরিয়ে নেওয়ার এ আদেশটি “আপত্তিজনক” এবং “চিকিৎসা সেবা এবং মানবতার উপর আক্রমণ”। হামাস দাবি করে যে ইসরায়েলি বিমান হামলায় উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে আসা অন্তত ৭০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাচ্ছে। তবে উভয় পক্ষের মধ্যে অব্যাহত সংঘর্ষ ও উত্তেজনা এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বড় বাধা হিসেবে রয়ে গেছে।