বনশ্রীতে শিশু ধর্ষণের অপরাধে গৃহশিক্ষকের মৃত্যুদণ্ড
২০২১ সালের ২৩ মার্চ রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে গৃহশিক্ষক জাহিদুল ইসলামকে (৩০) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক মোছাম্মৎ রোকশানা বেগম হেপী এই রায় প্রদান করেন।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, ২০২১ সালের ২৩ মার্চ সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী শিশুটির বাসায় আরবি শেখাতে আসেন গৃহশিক্ষক জাহিদুল ইসলাম। সেই সময় শিশুটির বাবা-মা বাসা সংলগ্ন গ্যারেজে কাজে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ তারা জাহিদুলকে তড়িঘড়ি করে বাসা থেকে বের হতে দেখেন। পরে শিশুটির কান্নার আওয়াজ শুনে ঘরে গিয়ে জানতে পারেন, জাহিদুল তাকে ধর্ষণ করেছে। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা খিলগাঁও থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
বিচার প্রক্রিয়া শেষে আদালত জাহিদুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. সাজ্জাদ হোসেন (সবুজ) রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “ধর্ষকের কোনো প্রকার ছাড় নেই। সকল ধর্ষকের আরও কঠিন সাজা হওয়া উচিত, যেন কেউ আর ধর্ষণ করার সাহসও না পায়।”
অপরদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী ইমরান হোসেন রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন, উচ্চ আদালতে গেলে আসামি খালাস পাবেন।
এই রায় সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকেই এই কঠোর শাস্তিকে সমর্থন করে মনে করেন, এটি ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে সহায়ক হবে। তবে, কিছু মানবাধিকার সংগঠন মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে বিকল্প শাস্তির পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন।
এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি, শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষকদের যথাযথ যাচাই-বাছাই করে নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এতে করে ভবিষ্যতে এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
বনশ্রীতে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় গৃহশিক্ষকের মৃত্যুদণ্ড সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রদান করে। এটি প্রমাণ করে যে, শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইন কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে, শুধুমাত্র শাস্তি প্রদানই নয়, সমাজের সকল স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব।