বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে সরকার
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন ও ইসলামিক খিলাফতের উত্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
ভারতের নয়াদিল্লিতে এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়ন, হত্যা ও অন্যান্য নির্যাতন চলছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের হুমকি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বৈশ্বিক তৎপরতা একই আদর্শ ও লক্ষ্য দ্বারা পরিচালিত হয়, যা ইসলামিক খিলাফতের মাধ্যমে শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
তুলসী গ্যাবার্ডের এই মন্তব্যের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি বিবৃতি দিয়ে তার বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর ও ক্ষতিকর বলে অভিহিত করে। সরকারের মতে, এই ধরনের মন্তব্য বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনামকে আঘাত করে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইসলাম চর্চার জন্য সুপরিচিত এবং চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি নতুন নয়। বিগত কয়েক বছরে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে সরকার প্রতিটি ঘটনার পর দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে এবং দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ও তাদের অধিকার রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্যের পর আন্তর্জাতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিছু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে বাংলাদেশের সরকার তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি মন্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত এবং বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।
বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য ও সরকারের প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কিছু মিডিয়া এই বিষয়ে সরকারের অবস্থানকে সমর্থন করেছে, আবার কিছু মিডিয়া সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে সরকারের আরও কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন, সংখ্যালঘু নির্যাতনের যেকোনো অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা উচিত। তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, দেশের অভ্যন্তরে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে এবং সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে।
তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য ও বাংলাদেশের সরকারের প্রতিক্রিয়া দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ও ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে সরকারের পাশাপাশি সমাজের সকল স্তরের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।