সেহরির সময় গাজায় ব্যাপক হামলা, নিহত ২২০
গাজার ওপর ইসরায়েল ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে , যার ফলে অন্তত ২২০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। নিহতদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে। হামাসের দাবি, যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভংগ করে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে। হামলায় গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি হয়েছে এবং শতাধিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) জানিয়েছে, তাদের হামলা মূলত হামাসের সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে পরিচালিত হয়েছে এবং গাজার গুরুত্বপূর্ণ হামাস কর্মকর্তা মাহমুদ আবু ওয়াফাহও মারা গেছেন।
১৯ জানুয়ারি থেকে বিরতির পর এটি গাজায় ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বিমান হামলা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) এই হামলা শুরু হওয়ার আগেই রমজানের সেহরি খাচ্ছিল অনেক মানুষ। কিছু সময়ের মধ্যে ২০টিরও বেশি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গাজার আকাশে উড়ে গাজা সিটি, রাফাহ ও খান ইউনিসের বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ চালায়। স্থানীয়দের মতে, বিস্ফোরণ এবং বিমান হামলার তীব্রতা এতটাই ছিল যে তা পুরো শহরকে কাঁপিয়ে তোলে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হামলার নির্দেশনা দিয়েছেন। তারা বলেছেন, হামাস বন্দিদের মুক্তি দিতে রাজি হয়নি এবং পূর্বে প্রস্তাবিত চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে, এজন্য এই হামলা চালানো হয়েছে। তারা আরো জানান, ভবিষ্যতে হামাসের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইসরায়েল দাবি করেছে, হামলার লক্ষ্য ছিল হামাসের শক্তিশালী অবকাঠামো, যেগুলো গাজার স্বাধীনতা যুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
হামাসের পক্ষ থেকে এই হামলাকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। তারা জানায়, চুক্তি ভঙ্গের কারণে ইসরায়েল তাদের পক্ষে থাকা বন্দি সেনাদের জন্য খারাপ পরিণতির সম্মুখীন হতে পারে। হামাসের দাবি, ইসরায়েল হামলা চালানোর আগে তাদের সঙ্গীদের মুক্তির বিষয়ে কোনো নোটিশ দেয়নি, ফলে পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে যাচ্ছে।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইসরায়েলকে হামলা চালানোর পরামর্শ দেয়। আমেরিকা ঘোষণা করেছে, তারা ইসরায়েলকে সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্য সহায়তা করতে প্রস্তুত।
এছাড়া, গাজার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়ে পড়েছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে প্রায় ৪৮,৫২০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, এবং এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। প্রায় ২১ লাখ ফিলিস্তিনি যাদের অধিকাংশই নিরীহ বেসামরিক নাগরিক, একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং গাজা শহরের ৭০ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে, খাদ্য ও জ্বালানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এছাড়া, রাস্তাঘাট ও চিকিৎসা ব্যবস্থার অভাবও পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে।