বসুন্ধরায় সারজিসের ওপর হামলা, নেপথ্যে কারা?
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তার অনুসারীদের তুমুল সংঘর্ষের ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। রাতেই তিনি থানায় গিয়ে হামলার অভিযোগ দায়ের করেন।
বুধবার (৫ মার্চ) মধ্যরাতে ভাটারা থানায় উপস্থিত হয়ে সারজিস আলম হামলাকারীদের ছাত্রদলের নেতাকর্মী বলে দাবি করেন এবং তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। তিনি অভিযোগ করেন, হামলাকারীদের বেশিরভাগই ছাত্র নয়, বরং বহিরাগত দুষ্কৃতকারী।
ভাটারা থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান, “এ ঘটনায় দুই পক্ষই থানায় উপস্থিত হয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলছি এবং বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।”
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সারজিস আলম তার অনুসারীদের নিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি সড়কে অবস্থান করছিলেন। এ সময় হঠাৎ করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় শুরু হয়, যা পরবর্তীতে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতিতে রূপ নেয়। রাত ১০টার দিকে এই সংঘর্ষ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের কাছাকাছি ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী দুজন জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়, যা একপর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়।
রাত ২টার দিকে সারজিস আলম তার ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্ট দেন, যেখানে তিনি হামলার জন্য সরাসরি ছাত্রদলকে দায়ী করেন। পোস্টে তিনি লেখেন, “ইফতারের পর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চায়ের আড্ডা দিতে গিয়েছিলাম। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে আলোচনা করি।”
তিনি আরও জানান, নর্থ সাউথ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, এআইইউবি ও ইউআইইউ-এর শতাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে আড্ডা শেষে হেঁটে আসার সময় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে ১০-১২ জনের একটি দল স্লোগান দিতে থাকে। তাদের মধ্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা আহমেদ শাকিলও ছিলেন বলে তিনি দাবি করেন।
সারজিস অভিযোগ করেন, “ওরা পরিকল্পিতভাবে আমার সঙ্গে থাকা শিক্ষার্থীদের গালিগালাজ করতে শুরু করে। তাদের মধ্যে ১-২ জন ছাত্র হলেও বাকিরা টোকাই সন্ত্রাসী মনে হয়েছে। আমি পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য দুই পক্ষকেই চলে যেতে বলি এবং নিজেও সরে আসি।”
তিনি আরও বলেন, “কিছুক্ষণ পর ছাত্রদলের শাকিলের নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী আমার সঙ্গে থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা ও পিঠে আঘাত করা হয়, যার ফলে বেশ কয়েকজন রক্তাক্ত হয়।”
এ বিষয়ে ছাত্রদল নেতা আহমেদ শাকিল বলেন, “একটি রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা নিজে উপস্থিত থেকে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন, তার সমস্ত প্রমাণ আমরা সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেব। ছাত্রদল কোনো ফেসবুক সংগঠন নয় যে, সবকিছু ফেসবুকে প্রকাশ করে মব জাস্টিস শুরু করব। আমি সংগঠনের দায়িত্বশীল পদে থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছি।”
পুলিশ উভয় পক্ষের বক্তব্য ও ভিডিও প্রমাণ পর্যালোচনা করে ঘটনার প্রকৃত সত্য উদঘাটনের চেষ্টা করছে।