সোমবার, ১০ই মার্চ, ২০২৫| রাত ১১:০৩

গাজায় মৃত্যুর মিছিল অব্যাহত: কারাগারে বন্দিদের হত্যা, শীতে নবজাতকের মৃত্যু

প্রতিবেদক
staffreporter
ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৫ ১:৫৭ অপরাহ্ণ
গাজায় মৃত্যুর মিছিল অব্যাহত: কারাগারে বন্দিদের হত্যা, শীতে নবজাতকের মৃত্যু

গাজায় মৃত্যুর মিছিল অব্যাহত: কারাগারে বন্দিদের হত্যা, শীতে নবজাতকের মৃত্যু

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিষ্ঠুরতা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। একদিকে বন্দি ফিলিস্তিনিদের কারাগারে মৃত্যুর মিছিল চলছে, অন্যদিকে তীব্র শীতে নবজাতক শিশুরাও জীবন হারাচ্ছে। ইসরায়েলি কারাগারে অন্তত ৫৯ ফিলিস্তিনি বন্দি প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের অধিকাংশই গাজার বাসিন্দা। এছাড়া তীব্র শীত ও মানবিক সংকটের কারণে গাজায় ছয় নবজাতকের করুণ মৃত্যু হয়েছে।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজার ওপর ইসরায়েলের সামরিক হামলা চলার পর থেকে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়েছে। তবে তাদের কী অবস্থা, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ করছে না ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। প্যালেস্টাইনিয়ান প্রিজন সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, নিহত বন্দিদের মধ্যে ৩৮ জনই গাজার বাসিন্দা। অভিযোগ উঠেছে, বন্দিদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে, যা তাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হতে পারে। সম্প্রতি গাজার ৩৫ বছর বয়সী মুসাব হানি হানিয়াহ ইসরায়েলি হেফাজতে মারা গেছেন। তার পরিবার জানিয়েছে, আটক হওয়ার আগে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন।

ফিলিস্তিনি হিসাব অনুযায়ী, ১৯৬৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি কারাগারে ২৯৬ ফিলিস্তিনি বন্দি প্রাণ হারিয়েছেন। বর্তমানে অন্তত ১০ হাজার ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি রয়েছেন। গাজা থেকে আটক হওয়া হাজার হাজার বন্দিকে এই পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, যা মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। ইসরায়েলি কারাগারে মৃত্যুর এই সংখ্যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ফিলিস্তিনিদের নিপীড়নের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে, গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত জনপদে ভয়াবহ শীতের কারণে অন্তত ছয় নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। পেশেন্টস ফ্রেন্ডস বেনিভল্যান্ট সোসাইটি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সাঈদ সালেহ জানিয়েছেন, গত দুই সপ্তাহে তীব্র শীতজনিত কারণে আটটি নবজাতক শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে তাদের মধ্যে ছয়জনই মারা গেছে।

গাজার হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধ, ইনকিউবেটর ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের সরঞ্জামের অভাবের কারণে শিশুদের বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। শীত নিবারণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থার অভাবে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি এখন তাঁবুতে জীবনযাপন করছে। কারো কারো ঠাঁই ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে, যেখানে উন্মুক্ত অবস্থায় প্রচণ্ড ঠাণ্ডা হানা দিচ্ছে। মানবিক সংকট এতটাই তীব্র যে, গাজার হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি আশ্রয় ও জ্বালানির ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বরং ইসরায়েল ও হামাস একে অপরের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। হামাস দাবি করেছে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির শর্ত মানছে না এবং বিধ্বস্ত গাজায় ভাসমান বাড়ি সরবরাহে বাধা দিচ্ছে। অন্যদিকে, ইসরায়েল হামাসের ওপর চাপ বাড়িয়ে বলেছে, বন্দি বিনিময় কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হলে তারা আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের অবিরাম হামলার ফলে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অঞ্চলটির ৬০ শতাংশ অবকাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৪৮ হাজার ৩৫০ ছাড়িয়েছে, আহতের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে।

গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা নিয়ে ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) অভিযোগ গিয়েছে। ইসরায়েলকে দেওয়া অস্ত্র সহায়তা ও কূটনৈতিক সুরক্ষা দেওয়ার অভিযোগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের নৃশংসতা বন্ধ না হলে এটি কেবল মধ্যপ্রাচ্য নয়, পুরো বিশ্বে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ