মঙ্গলবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৫| রাত ৪:০৩

সংশোধন হচ্ছে আইন – শুধু রণাঙ্গনের যোদ্ধারাই মুক্তিযোদ্ধা, বাকিরা সহযোগী

প্রতিবেদক
staffreporter
ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৫ ১:২২ অপরাহ্ণ
সংশোধন হচ্ছে আইন - শুধু রণাঙ্গনের যোদ্ধারাই মুক্তিযোদ্ধা, বাকিরা সহযোগী

সংশোধন হচ্ছে আইন – শুধু রণাঙ্গনের যোদ্ধারাই মুক্তিযোদ্ধা, বাকিরা সহযোগী

১৯৭১ সালে যারা সরাসরি রণাঙ্গনে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, তারাই কেবল ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। অন্যদিকে, যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছেন, বিশ্বজনমত গঠনে কাজ করেছেন কিংবা কূটনৈতিক সহায়তা অর্জনে ভূমিকা রেখেছেন, তারা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে গণ্য হবেন।

বর্তমান আইনে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত এমন আট ধরনের পেশাজীবী ও ব্যক্তি, যারা সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেননি, তাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। এই সংজ্ঞা পরিবর্তনের লক্ষ্যে ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০২২’ সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ জারি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে এবং এ নিয়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মার্চের প্রথম সপ্তাহে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে খসড়াটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।

বর্তমানে দেশে জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৯১ হাজার ৯৯৮ জন। তবে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৭৬ জন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা সংশোধন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘যারা রণাঙ্গনে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, তাদের মর্যাদা রক্ষায় এবং সহযোগীদের আলাদা স্বীকৃতি দিতে এই পরিবর্তন আনা হচ্ছে। যুদ্ধকালীন সংগঠক, বিদেশে জনমত গঠনে কাজ করা ব্যক্তি, মুজিবনগর সরকারের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা মুক্তিযোদ্ধার পরিবর্তে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত হবেন।’’

বর্তমান আইনে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার পর যেসব ব্যক্তি দেশের অভ্যন্তরে থেকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন, তারাই মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু নতুন খসড়া অধ্যাদেশে এই সংজ্ঞা সংশোধন করা হচ্ছে।

খসড়া অধ্যাদেশ অনুযায়ী, শুধুমাত্র রণাঙ্গনে সরাসরি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, এমন ব্যক্তিরাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন। অন্যদিকে, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলী, বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনকারীরা, মুজিবনগর সরকারের সদস্য ও কর্মকর্তারা, এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সাংবাদিকরা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত হবেন। তবে নির্যাতিতা বীরাঙ্গনা এবং আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া চিকিৎসক ও নার্সরা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবেন।

ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘‘মুক্তিযোদ্ধাদের মূল দাবি হলো, যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, শুধু তারাই মুক্তিযোদ্ধা হবেন। ভাতা বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কারও আপত্তি নেই, কিন্তু মর্যাদার প্রশ্নে তারা স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন।’’

আগামী বৃহস্পতিবার জামুকার (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) সভায় খসড়া অধ্যাদেশ চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা। আশা করা হচ্ছে, মার্চের প্রথম সপ্তাহেই এটি উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা যাবে।

এছাড়া, মুক্তিযোদ্ধাদের বয়সসীমা নিয়ে চলমান মামলার নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে সরকার। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা হতে হলে ১৯৭১ সালে বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ৬ মাস হতে হয়। আদালত এই বয়সসীমা বহাল রাখলে অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি