‘অবৈধ টাকা দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে আ.লীগ’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী অভিযোগ করেছেন যে, আওয়ামী লীগ দেশ থেকে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ ফিরিয়ে এনে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টের চেষ্টা করছে। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এই ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই সফল হতে দেওয়া হবে না এবং যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ৩টা ৫ মিনিটে বারিধারা ডিওএইচএসের নিজ বাসভবনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি, আওয়ামী লীগের দোসররা বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে এনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে। তারা বিভিন্ন গোষ্ঠীকে অর্থ দিয়ে সরকারকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু আমরা কোনো অবস্থাতেই তা হতে দেব না।”
তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি, দেশের কোথাও যেন কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। তাদের টহল কার্যক্রম আরও জোরদার করতে বলা হয়েছে এবং তারা যদি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা দেশের শান্তি বিনষ্টের চেষ্টা করবে, তাদের আমরা ঘুমাতে দেব না, কোথাও নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পাবে না।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র চলছে, কিন্তু দেশের জনগণকে আমি আশ্বস্ত করতে চাই— আমরা শক্ত হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করব। যারা দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তারা ব্যর্থ হবে এবং কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমাগত উন্নতি করছে এবং এটা নষ্ট করার যেকোনো চেষ্টাই ব্যর্থ হবে।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর অবস্থান গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছি, আগামীকাল থেকে যেন কোথাও কোনো ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি না হয়। প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে। যে কোনো মূল্যে দেশকে স্থিতিশীল রাখা হবে।”
তিনি বলেন, “আমাদের কাছে নির্ভরযোগ্য তথ্য রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও দলটির কিছু শীর্ষ নেতা এবং সহযোগী সংগঠনগুলো সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। তারা বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে এনে একদল ভাড়াটে সন্ত্রাসী এবং দুষ্কৃতকারীকে ব্যবহার করে দেশকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। তারা এই টাকা বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে, যাতে দেশজুড়ে অরাজকতা সৃষ্টি করা যায়। কিন্তু আমরা এই ষড়যন্ত্র সফল হতে দেব না।”
তিনি আরও বলেন, “যারা আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়ে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি বাহিনীর সদস্যদের স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছি— কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমাদের অভিযান ‘ডেভিল হান্ট’ অব্যাহত থাকবে। এই অভিযানের আওতায় সন্ত্রাসীরা কোথাও বসতে পারবে না, দাঁড়াতে পারবে না, এমনকি ঘুমাতেও পারবে না।”
তিনি দেশের জনগণকে আশ্বস্ত করে বলেন, “বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধাপে ধাপে আরও উন্নতি করবে। অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির যেকোনো চেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা হবে। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আওয়ামী লীগের দোসরদের কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না। তারা অনেক টাকা নিয়ে রেখেছে, সেই টাকা বিভিন্ন জনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে, কিন্তু আমরা তা সফল হতে দেব না।”
তিনি আরও বলেন, “দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক, এটা আমরা নিশ্চিত করব। যারা দেশের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ব্যাহত করার চেষ্টায় লিপ্ত, তাদের কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে। সরকার কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সহ্য করবে না। যে কোনো ষড়যন্ত্র কঠোরভাবে দমন করা হবে এবং দুষ্কৃতকারীরা শাস্তি এড়াতে পারবে না।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এই বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে যে, সরকার রাজনৈতিক অস্থিরতা রোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সক্রিয় করা হয়েছে এবং যেকোনো মূল্যে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এবং সরকারের কঠোর অবস্থানের ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন উত্তেজনা তৈরি হতে পারে।
