সোমবার, ১০ই মার্চ, ২০২৫| রাত ১১:২২

‘ভুল মরদেহ’ নিয়ে ইসরায়েল-হামাসের নতুন উত্তেজনা; নতুন মরদেহ প্রেরণ

প্রতিবেদক
staffreporter
ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫ ৬:৫৫ অপরাহ্ণ
‘ভুল মরদেহ’ নিয়ে ইসরায়েল-হামাসের নতুন উত্তেজনা; নতুন মরদেহ প্রেরণ

‘ভুল মরদেহ’ নিয়ে ইসরায়েল-হামাসের নতুন উত্তেজনা; নতুন মরদেহ প্রেরণ

গাজার বিপর্যস্ত পরিস্থিতি আবারও নতুন সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, কারণ ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ‘ভুল মরদেহ’ ইস্যু এখন উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসলামিক জিহাদ, ইসরায়েলের কাছে চারজন জিম্মির মরদেহ ফেরত দেয়। তবে ফরেনসিক পরীক্ষার পর ইসরায়েল জানায়, এদের মধ্যে তিনজন ইসরায়েলি হলেও, একজন গাজার এক অজ্ঞাত নারী। হামাস দাবি করেছিল, ওই মরদেহটি ছিল ইসরায়েলি নারী জিম্মি সিরি বিবাসের, যিনি তার দুই শিশুসন্তানের সঙ্গে নিহত হয়েছিলেন। তবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে এবং ক্ষোভ প্রকাশ করে।

এরপরই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সিরি বিবাসের মরদেহ ফেরত না দেওয়া হলে গাজার বিরুদ্ধে আবারও তীব্র সামরিক অভিযান শুরু করা হবে। তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন দেশটির অন্যান্য শীর্ষ রাজনীতিবিদরাও। ইসরায়েলের এই হুমকিতে গাজা উপত্যকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ইতিমধ্যেই যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাবাসীরা ভয় ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। অনেকেই বলছেন, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকেই পরিস্থিতি ছিল ভঙ্গুর, কিন্তু এখন এটি আরও সংকটময় পর্যায়ে পৌঁছেছে।

গাজার স্থানীয়রা জানান, হামাসের পক্ষ থেকে ছয়জন জীবিত জিম্মি মুক্তি দেওয়ার কথা থাকলেও এই ভুল মরদেহ বিতর্ক নতুন করে সংঘাতের আগুনে ঘি ঢেলেছে। ইসরায়েলি সেনারা যে কোনো সময় গাজায় বড় ধরনের হামলা শুরু করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। হামাসের এক জ্যেষ্ঠ নেতা জানিয়েছেন, সিরি বিবাস ও তার সন্তানদের মরদেহের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাদের দাবি, বিমান হামলার প্রচণ্ডতায় মরদেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়, আর সেই কারণেই তারা ভুল করে অন্য একজনের মরদেহ ইসরায়েলকে দিয়ে দিয়েছে।

এদিকে, নতুন করে উত্তেজনা বাড়ার মধ্যেই গতকাল (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতের আঁধারে ইসরায়েলে একটি মরদেহ পাঠিয়েছে হামাস। গাজার খান ইউনিস থেকে রেডক্রসের মাধ্যমে মরদেহটি ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। হামাস বলছে, এবার তারা নিশ্চিত যে এটি সিরি বিবাসের মরদেহ। কিন্তু ইসরায়েলি সেনারা সেটি গ্রহণ করলেও, এখনো ফরেনসিক পরীক্ষা শেষ হয়নি।

টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, নতুন করে পাঠানো মরদেহটি তেল আবিবের আবু কারিম ফরেনসিক ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে বিশদ পরীক্ষা শেষে জানা যাবে, এটি আসলেই সিরি বিবাসের মরদেহ কি না। অন্যদিকে, হামাস বলছে, যদি ভুল হয়ে থাকে, তাহলে সেটি তারা শুধরে নিতে প্রস্তুত। কিন্তু ইসরায়েল এই দাবি মানতে নারাজ এবং এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল আবারও গাজায় সামরিক হামলা চালাতে পারে। ইতোমধ্যে ইসরায়েলের ভেতর থেকে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠছে। দেশটির একাধিক রাজনৈতিক নেতা বলছেন, হামাস যদি সিরি বিবাসের মরদেহ ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এটি ইসরায়েলের জন্য যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হবে।

গাজার সাধারণ জনগণ এই নতুন সংকটের ফলে গভীর উদ্বেগে রয়েছে। এক গৃহহীন ফিলিস্তিনি বলেন, “আমরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বেঁচে থাকার লড়াই করছি। প্রতিদিন নতুন শঙ্কা নিয়ে ঘুমাতে যাই, জানি না পরদিন সকালে আর বেঁচে থাকব কি না।”

এদিকে, হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা যুদ্ধ চাইছে না, বরং গাজার জনগণকে রক্ষা করতে চায়। তবে ইসরায়েল যদি যুদ্ধ বাধাতে চায়, তাহলে তার জবাব দেওয়ার জন্যও প্রস্তুত রয়েছে তারা।

বিশ্বজুড়ে এই পরিস্থিতি গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ইসরায়েল ও হামাস উভয় পক্ষকে আরও সংযত হতে হবে এবং কোনো ভুল বোঝাবুঝির কারণে যেন নতুন করে যুদ্ধ না বাঁধে, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

এই সংকটের শেষ কোথায়, তা কেউ জানে না। তবে ‘ভুল মরদেহ’ ইস্যু যে পুরো অঞ্চলের জন্য একটি নতুন অশান্তির সূত্রপাত করতে পারে, তা এখন বেশ স্পষ্ট।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ