রবিবার, ২রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫| রাত ১১:০১

সিরিয়ায় এক দশকের গৃহযুদ্ধ ও অবশেষে স্বৈরশাসক বাশার আসাদ এর পতন

প্রতিবেদক
staffreporter
ডিসেম্বর ৯, ২০২৪ ২:৫০ অপরাহ্ণ

সিরিয়ায় এক দশকের গৃহযুদ্ধ ও অবশেষে স্বৈরশাসক বাশার আসাদ এর পতন।

সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে দুই দশকের নির্মম শাসনের সমাপ্তি ঘটেছে। মাত্র ১২ দিনের বিদ্রোহের মুখে বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখল করে এবং তাদের নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।

এর মধ্যেই দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে অন্তত ৭৫টি বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সেন্টকম কমান্ডার মাইকেল কুরিলা জানিয়েছেন, এসব হামলা আই এস আই এলের পুনর্গঠন প্রচেষ্টাকে ভণ্ডুল করার উদ্দেশ্যে চালানো হয়েছে। সিরিয়ায় ৯০০ মার্কিন সেনা বর্তমানে অবস্থান করছে, যারা সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে বাদিয়াহ মরুভূমিতে আই এস-এর পুনর্গঠন প্রক্রিয়া লক্ষ্যবস্তু করেছে।

বাশার শাসনের অন্ধকার যুগ:
নির্মম গণহত্যার দলিলঃ

বাশার আল-আসাদ ২০০০ সালে তার পিতা হাফিজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন। প্রথম দিকে তিনি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও শীঘ্রই বাবার মতো কর্তৃত্ববাদী স্বৈরশাসকে রূপ নেন। তার শাসনামলে সিরিয়া রূপ নেয় এক ভয়াবহ দমন-পীড়নের রাষ্ট্রে।

২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউয়ে যখন সিরিয়ার মানুষ গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য রাস্তায় নামল, তখন আসাদ বাহিনী তাদের উপর নির্মম নির্যাতন চালায়। গণহারে গ্রেপ্তার, গুম, হত্যা এবং রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের মতো ভয়াবহ অপরাধের মাধ্যমে বাশার তার শাসন শক্ত করতে চেয়েছিলেন। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা একাধিকবার তার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলেছে।

সিরিয়ার ২০ বছরের বিভীষিকাঃ

১. গণহত্যা ও রাসায়নিক হামলাঃ

২০১৩ সালে গৌতায় রাসায়নিক অস্ত্র হামলা চালানো হয়, যেখানে কয়েক হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটিকে আধুনিক যুগের অন্যতম নৃশংসতম অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে।

২. মানবাধিকার লঙ্ঘনঃ

বিরোধীদের উপর নির্বিচারে অত্যাচার ও হত্যা ছিল আসাদ সরকারের নিত্য ঘটনা। নির্যাতনের ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে, কারাগারে মৃত্যু ঠেকানোর জন্য অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিত।

৩. জাতিগত নিধনঃ

আসাদের শাসনে কুর্দি, সুন্নি এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ভয়াবহ নিপীড়নের শিকার হয়েছে। তাদের গ্রামগুলিতে গণহারে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে।

৪. গৃহযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞঃ

২০১১ থেকে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে প্রায় পাঁচ লক্ষের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। শরণার্থী হিসেবে দেশ ছেড়েছে ৭০ লাখের বেশি। সিরিয়ার শহরগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সমর্থন ও পতনের কারণঃ

আসাদের দীর্ঘ শাসনকাল টিকে ছিল মূলত রাশিয়া ও ইরানের শক্তিশালী সমর্থনের কারণে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই দুই মিত্রই সিরিয়ায় তাদের সামরিক উপস্থিতি হ্রাস করে। বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম মাত্র তিনটি শহর দখল করার পরই বাশার আল-আসাদ গোপনে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় নতুন বার্তাঃ

মার্কিন প্রশাসন একথা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, আইএস-এর মতো জঙ্গিগোষ্ঠী বা তাদের মদদদাতা যে-ই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। সিরিয়ার বিদ্রোহীদের এই বিজয় নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

বিশ্ব বিবেকের প্রশ্নঃ

বাশার আল-আসাদের এই নির্মম শাসনের পরও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এতদিন কেন যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সিরিয়ার মানুষের ওপর ২০ বছর ধরে চলা নির্যাতন-নিপীড়নের যে নির্মম কাহিনি, তা বিশ্ব বিবেকের কাছে এক গভীর দায়বদ্ধতার বিষয়।

সিরিয়ার জনগণ এখন নতুন ভোরের অপেক্ষায়। কিন্তু বাশার শাসনের অমানবিক ইতিহাস তাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, স্বাধীনতা সবসময় রক্তের দামে কেনা।

শরীফ আব্দুল্লাহ মাসউদ
প্রধান সম্পাদক।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ

আপনার জন্য নির্বাচিত

পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

বিপিএল সিলেট পর্ব: রংপুরের আধিপত্য, ঢাকার ইতিহাস গড়া জয় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সিলেট পর্ব শেষ হলো রংপুর রাইডার্সের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স এবং ঢাকার প্রথম জয়ের রেকর্ড দিয়ে। সাত ম্যাচে সাত জয় নিয়ে রংপুর এখন শীর্ষে, যেখানে নুরুল হাসান সোহানের দল প্লে-অফে জায়গা প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে। অন্যদিকে, ছয় ম্যাচ পর অবশেষে প্রথম জয় পেয়েছে ঢাকা ক্যাপিটালস। ঢাকার রেকর্ড জয় ঢাকা ক্যাপিটালসের টানা ছয় ম্যাচের ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙেছে লিটন দাস ও জুনিয়র তামিমের অসাধারণ পারফরম্যান্স। রাজশাহীর বিপক্ষে তারা ১৪৯ রানের জয় তুলে নিয়েছে, যা বিপিএলের ইতিহাসে রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় জয়। পয়েন্ট তালিকা (সিলেট পর্ব শেষে) দল ম্যাচ জয় হার পয়েন্ট নেট রান রেট রংপুর রাইডার্স ৭ ৭ ০ ১৪ +১.৫৪২ চিটাগং কিংস ৪ ৩ ১ ৬ +১.৩২৩ ফরচুন বরিশাল ৫ ৩ ২ ৬ +০.৮৩৮ খুলনা টাইগার্স ৫ ২ ৩ ৪ +০.১৩০ সিলেট স্ট্রাইকার্স ৬ ২ ৪ ৪ –১.২৫৪ দুর্বার রাজশাহী ৬ ২ ৪ ৪ –২.১১৭ ঢাকা ক্যাপিটালস ৭ ১ ৬ ২ –০.০৯৭ রংপুরের শীর্ষস্থান ও অন্য দলের অবস্থান রংপুর রাইডার্সের ধারাবাহিক সাফল্য বিপিএলে তাদের আধিপত্যকে শক্তিশালী করেছে। চিটাগং কিংস চার ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে, নেট রান রেটে এগিয়ে। ফরচুন বরিশাল সমান পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে। সিলেট স্ট্রাইকার্স ও দুর্বার রাজশাহী ছয় ম্যাচে সমান ৪ পয়েন্ট পেলেও নেট রান রেটের ভিত্তিতে পাঁচ ও ছয়ে রয়েছে। ম্যাচ সমান নয় সব দল এখনো সমান ম্যাচ খেলেনি। রংপুর ও ঢাকা ৭টি করে ম্যাচ খেললেও চিটাগং কিংস খেলেছে মাত্র ৪টি। ফলে পয়েন্ট তালিকার চিত্র বদলানোর সুযোগ এখনো রয়েছে। সিলেট পর্বের সারাংশ সিলেট পর্বে একমাত্র জয়শূন্য দল ছিল খুলনা টাইগার্স। রংপুর ও চিটাগং কিংস এই পর্বে অপরাজিত থেকে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। এখন বিপিএল ছুটছে চট্টগ্রামের পথে, যেখানে নতুন উত্তেজনা ও প্রতিযোগিতা দর্শকদের উপভোগ্য করে তুলবে।

বিপিএল সিলেট পর্ব: রংপুরের আধিপত্য, ঢাকার ইতিহাস গড়া জয়

ডিজিটাল মাধ্যমে প্রতারণার শিকার বেঙ্গালুরুর প্রযুক্তিকর্মী, হারালেন ১১ কোটি টাকা

ডিজিটাল মাধ্যমে প্রতারণার শিকার বেঙ্গালুরুর প্রযুক্তিকর্মী, হারালেন ১১ কোটি টাকা

আজকের আবহাওয়া (২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫)

আজকের আবহাওয়া (৩০ জানুয়ারি, ২০২৫)

ট্রাম্পের নামে ক্রিপ্টোকারেন্সি চালু, মূল্য আকাশচুম্বী

ট্রাম্পের নামে ক্রিপ্টোকারেন্সি চালু, মূল্য আকাশচুম্বী

ফ্রান্সের নতুন প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঙ্কোইস বায়রো

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ২০০ কার্গো হেলপার পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ

অসহযোগ আন্দোলনের ডাক ইমরান খানের

ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কের উষ্ণতা: পুরনো ক্ষত সেরে উঠবে কি?

ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কের উষ্ণতা: পুরনো ক্ষত সেরে উঠবে কি?

একাত্তরে আপনাদের ভূমিকা কী ছিল, জামায়াতের উদ্দেশে রিজভীর প্রশ্ন

একাত্তরে আপনাদের ভূমিকা কী ছিল, জামায়াতের উদ্দেশে রিজভীর প্রশ্ন