ই-সিম: আধুনিক প্রযুক্তির স্মার্ট সমাধান, সঙ্গে কিছু সীমাবদ্ধতাও
ধীরে ধীরে দেশের প্রযুক্তিপ্রেমী মানুষের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ই-সিম। অনেকেই এখন ফিজিক্যাল সিম কার্ডের পরিবর্তে এই আধুনিক ও ভার্চুয়াল সিম ব্যবহারে ঝুঁকছেন। গুগল তো এমনকি ঘোষণা দিয়েছে, তাদের ভবিষ্যতের অ্যান্ড্রয়েড ফোনে আর কোনো সিম স্লট থাকবে না, অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে ই-সিম নির্ভর হবে। এতে যেমন ফোনে জায়গা বাঁচবে, তেমনি একাধিক সিম ব্যবহারের খরচও কমবে।
ই-সিম বা এমবেডেড সাবস্ক্রাইবার আইডেন্টিটি মডিউল হলো একটি ভার্চুয়াল সিম, যেটি ফোনে ইনস্টল করা থাকে এবং টেলিকম কোম্পানির মাধ্যমে ওভার-দ্য-এয়ার সক্রিয় করা হয়। এটি দিয়ে কল, মেসেজ, ইন্টারনেট সবই চালানো যায়, কিন্তু আলাদা করে ফোনে সিম ঢোকানোর প্রয়োজন পড়ে না।
ই-সিমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সিম বদলাতে আর ফিজিক্যাল কার্ড প্রয়োজন হয় না। অপারেটর পরিবর্তন করলেও সেটিংসে গিয়ে সহজেই সেটি পরিবর্তন করা যায়। ফোন পানিতে ভিজলেও সিমে কোনো সমস্যা হয় না। একইসঙ্গে এক ফোনে একাধিক নম্বর ব্যবহারের সুবিধাও মেলে। অনেক ক্ষেত্রে একসঙ্গে পাঁচটি পর্যন্ত ই-সিম ব্যবহার করা গেলেও প্রায়শই তিনটির বেশি অনুমোদন দেওয়া হয় না। এছাড়া বিদেশ সফরের সময় লোকাল নম্বর নেওয়ার জন্য ই-সিম বেশ উপকারী। এটি ওয়ার্ক ও পার্সোনাল নম্বর আলাদা করতেও কার্যকর।
চুরি যাওয়া ফোন ট্র্যাক করাও সহজ হয়ে যায়, কারণ ই-সিম খোলা যায় না বা আলাদা করা যায় না। ফলে অপরাধীরা সহজে সিম ফেলে দিতে পারে না।
তবে ই-সিম ব্যবহারে কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো—এক ফোন থেকে অন্য ফোনে সরাসরি ই-সিম স্থানান্তর সম্ভব নয়। প্রতিবার নতুন ফোনে সেটি নতুনভাবে অ্যাক্টিভেট করতে হয়, যা অনেকের কাছে ঝামেলাপূর্ণ। তাছাড়া, একসঙ্গে অনেক ই-সিম সংরক্ষণ করা গেলেও, সবগুলো নম্বর একসাথে সক্রিয় রাখা যায় না। কল করার সময় বা কল আসার সময় বেছে নেওয়া নম্বর ব্যতীত অন্য নম্বরগুলো নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সব ফোনেই এখনো ই-সিম সুবিধা নেই। সাধারণত আইফোন, গুগল পিক্সেল, স্যামসাং, অপো ও সোনির ফ্ল্যাগশিপ মডেলগুলোতেই ই-সিম সাপোর্ট করে। ফলে এখনো অধিকাংশ ব্যবহারকারী ই-সিম সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ই-সিম প্রযুক্তি ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা হয়ে উঠলেও, এর পূর্ণ সুবিধা ভোগ করতে হলে ব্যবহারকারীদের আরও অপেক্ষা করতে হবে—বিশেষ করে যারা মাঝারি মূল্যের ফোন ব্যবহার করেন। তবুও, প্রযুক্তির এই নতুন ধারা ধীরে ধীরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের বাজারেও নিজেদের জায়গা করে নিচ্ছে।