গাজায় ত্রাণ পাঠাতে গিয়ে আটক জাহাজ, গ্রেপ্তার গ্রেটা থুনবার্গসহ ১২ জন
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার মানুষের জন্য ত্রাণ ও খাদ্যবাহী জাহাজ পাঠাতে গিয়ে ইসরায়েলের হাতে আটক হয়েছেন পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ এবং ফ্রান্সের এমপি রিমা হাসানসহ আরও ১০ জন। তাদের বহনকারী ‘ম্যাডলিন’ নামের জাহাজটি ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের উদ্যোগে ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমা দিয়ে গাজা উপকূলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল। গত রোববার স্থানীয় সময় রাত ২টার দিকে ইসরায়েলের নৌবাহিনী জাহাজটিকে থামিয়ে যাত্রীদের আটক করে। এরপর তাদের ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হয়।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জানায়, আটক ব্যক্তিরা এখন ইসরায়েলি হেফাজতে রয়েছেন এবং তাদের নিরাপদে রাখা হয়েছে। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানায়, “সেলিব্রেটিদের বহনকারী সেই সেলফি জাহাজটিকে উপকূলে আনা হয়েছে। তাদেরকে স্যান্ডউইচ ও পানি সরবরাহ করা হয়েছে।”
ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে জাহাজটিতে ত্রাণ সামগ্রী, খাদ্য ও শিশুখাদ্য পাঠানো হচ্ছিল। ম্যাডলিন ব্রিটিশ পতাকাবাহী একটি ছোট জাহাজ, যার আকার ও ত্রাণের পরিমাণ সীমিত হলেও প্রতীকী গুরুত্ব ছিল অনেক। ইসরায়েল জানায়, ওই ত্রাণসামগ্রী তারা যথাযথ মানবিক চ্যানেলের মাধ্যমে গাজায় পাঠাবে।
উল্লেখ্য, ১ জুন ইতালির সিসিলি উপকূল থেকে যাত্রা শুরু করে ম্যাডলিন। এ অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছিল ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি), যা ফিলিস্তিনপন্থি আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা সংস্থা হিসেবে পরিচিত। তাদের এই প্রচেষ্টার মূল উদ্দেশ্য ছিল অবরুদ্ধ গাজায় সরাসরি ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া।
ইসরায়েল ২০০৭ সাল থেকে গাজা উপকূলে জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে। হামাসের ক্ষমতা গ্রহণের পর এই নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর হয়। সেই নিষেধাজ্ঞা ভাঙার দায়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ জাহাজ আটকানোর নির্দেশ দেন।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনবিষয়ক বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা অ্যালবানেজ এই অভিযানে অংশগ্রহণকারীদের সাহসিকতার প্রশংসা করে বলেন, “ম্যাডলিনের যাত্রা হয়তো থেমে গেছে, কিন্তু মিশন শেষ হয়নি। গাজার জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী প্রতিটি বন্দর থেকে সেখানে ত্রাণ পাঠানো উচিত।”
ইসরায়েলের টানা সামরিক অভিযান ও গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ থাকায় সেখানে এখন ভয়াবহ মানবিক সংকট চলছে। খাদ্য, ওষুধ ও সুপেয় পানির অভাবে ফিলিস্তিনিদের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক মহলে এ নিয়ে প্রতিবাদ ও মানবিক সহায়তার আহ্বান বাড়ছে।