নতুন বাংলাদেশ গড়তে ১.০৬৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে জাপান
বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা, রেলপথ উন্নয়ন ও শিক্ষাবৃত্তির জন্য মোট ১ দশমিক ০৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেবে জাপান। শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরের তৃতীয় দিনে টোকিওতে এ সংক্রান্ত চুক্তিপত্র বিনিময় হয়। চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে দেশটিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী এবং জাপানের পক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত শিনিচি সাইদা স্বাক্ষর করেন।
এই সহায়তার মধ্যে উন্নয়ন নীতি ঋণ হিসেবে ৪১৮ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ থাকবে, যা অর্থনৈতিক সংস্কার ও জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধিতে কাজে লাগানো হবে। জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রেললাইনকে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে রূপান্তরের জন্য বরাদ্দ করা হবে ৬৪১ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া স্কলারশিপ বা শিক্ষাবৃত্তি বাবদ বরাদ্দ থাকবে ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার।
সফরের অংশ হিসেবে ড. ইউনূস টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবা শিগেরুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচি, জাতি গঠন এবং শান্তিপূর্ণ উত্তরণে জাপানের পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। দুই দেশের নেতৃবৃন্দ কৌশলগত অংশীদারিত্ব, আইনের শাসন ও গণতন্ত্রভিত্তিক বহুপাক্ষিকতার প্রতি সমর্থন জানান এবং একটি উন্মুক্ত ও শান্তিপূর্ণ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
বৈঠকে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেন ইশিবা শিগেরু। এ বিষয়ে জাপান সরকারের অব্যাহত সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়। উভয় পক্ষের মতে, এই সংকটের স্থায়ী সমাধান হলো রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন, যা আন্তরিক সংলাপের মাধ্যমে সম্ভব।
পরে টোকিওতে জেট্রো ও জাইকার উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ বিজনেস সেমিনার’-এ প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ এখন এক কঠিন সময় পার করছে। একটি ঐতিহাসিক ধ্বংসযজ্ঞের পর আমরা আবার নতুন করে সবকিছু গড়ার চেষ্টা করছি। এ কাজে জাপানের সর্বাত্মক সহায়তা কামনা করেন তিনি। মাতারবাড়ী প্রকল্পে জাপানের অব্যাহত সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি এবং বলেন, বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য সমুদ্রপথে প্রবেশের ‘দরজা’।
সেমিনারে জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্পবিষয়ক পার্লামেন্টারি ভাইস মিনিস্টার তাকেউচি শিনজি বলেন, ড. ইউনূসের নেতৃত্বে জাপান বাংলাদেশকে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখছে এবং জাপানি কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে সেমিনারের ফাঁকে ছয়টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। এর মধ্যে রয়েছে জ্বালানি খাতে জেবিআইসি ও বাংলাদেশের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চুক্তি, গ্যাস মিটার ও গার্মেন্টস এক্সেসরিজ উৎপাদন সংক্রান্ত জমি লিজ, ব্যাটারিচালিত বাইসাইকেল তৈরির কারখানা স্থাপন, তথ্য নিরাপত্তা প্রকল্পে বিনিয়োগ এবং বিডা ও জাইকার মধ্যে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তি।
এদিন জাপানের সোকা বিশ্ববিদ্যালয় ড. ইউনূসকে সামাজিক উদ্ভাবন ও বৈশ্বিক উন্নয়নের জন্য সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। এ সময় তিনি তরুণদের পৃথিবী রক্ষায় ‘থ্রি জিরো ক্লাব’ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বর্তমান সভ্যতা ধ্বংসাত্মক পথে এগোচ্ছে এবং আমাদের নতুন ধরনের সমাজ ও অর্থনীতির প্রয়োজন। এজন্য বিশ্বজুড়ে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে।
পুরো সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ এবং প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।