বন্ধুর হবু স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রদল নেতা বহিষ্কার, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার
নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুরে ঘটে গেল এক লজ্জাজনক ও নৃশংস ঘটনা। বন্ধুর হবু স্ত্রীকে হোটেলে জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল আহমেদ ওরফে দুর্জয় (২৪)। একইসঙ্গে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তাকে বহিষ্কারও করেছে ছাত্রদল।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাতে জেলা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ফয়সাল আহমেদকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি শামসুল হুদা। সিদ্ধান্তটি অনুমোদন করেছেন জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সারোয়ার আলম ও সাধারণ সম্পাদক অনিক মাহবুব চৌধুরী।
কী ঘটেছিল সেই দিন?
স্থানীয় সূত্র, থানা-পুলিশ এবং দলীয় সূত্রে জানা যায়, ধর্ষণের শিকার হওয়া ২০ বছর বয়সী তরুণী রাজধানীর একটি কলেজে সম্মান তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। তার সঙ্গে কলমাকান্দা উপজেলার এক ছাত্রের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ের তারিখও নির্ধারিত হয়। বিয়ের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তারা সোমবার দুর্গাপুর এলাকায় ঘুরতে যান।
ছাত্রদল নেতা ফয়সাল আহমেদের সঙ্গে ভিকটিমের প্রেমিকের বন্ধুত্ব ছিল। সেই সূত্রেই তার কথামতো এক হোটেলে ওঠেন তারা। কিন্তু পরদিন (মঙ্গলবার) বিকেলে খাবার কিনতে বাইরে যান প্রেমিক, তখন তরুণী হোটেল রুমে একা ছিলেন। ঠিক সেই সময়েই ঘটে ভয়াবহ ঘটনাটি।
ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে ফয়সাল আহমেদ পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জানান, ওই ছাত্র ‘ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী’ এবং তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা দরকার। পুলিশ সেই তথ্য যাচাই না করেই তাকে আটক করে। আর সেই সুযোগে ফয়সাল হোটেল রুমে ঢুকে তরুণীকে ধর্ষণ করেন। মেয়েটি বাধা দিলে ফয়সাল তাকে মারধরও করে বলে অভিযোগ।
পরে পুলিশের কাছে আটক হওয়া প্রেমিক জানান, তার হবু স্ত্রী হোটেল রুমে অপেক্ষা করছেন। পুলিশ তখন হোটেলে গিয়ে দরজা বন্ধ পায় এবং ভিতর থেকে চিৎকার শোনার পর রুমে ঢুকে তরুণীকে উদ্ধার করে ও ফয়সালকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে।
দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান জানান, তরুণীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ফয়সাল আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা হয়েছে। তাকে আদালতে তোলা হবে এবং ভিকটিমকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার
এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার পর ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে ফয়সালকে বহিষ্কার করে। নেত্রকোনা জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক অনিক মাহবুব চৌধুরী বলেন, “দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের কারণে তাকে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। দলের সকল নেতাকর্মীদের তার সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।”
প্রসঙ্গত, এর আগেও চলতি বছরের ২৯ মার্চ দুর্গাপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক পারভেজ মোশারফ ও পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক আরিফুল রহমানকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়।
এই ঘটনাটি ছাত্ররাজনীতির নামে ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার ঘৃণ্য চেহারার আরেকটি প্রমাণ। আইন অনুযায়ী অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে এলাকাবাসী ও সচেতন মহল।