ভারত-পাকিস্তানে আবারও সংঘাতের আশঙ্কা
কাশ্মীরের পহেলগাম—যেখানে বরফে ঢাকা পাহাড় আর পাইনবনের মাঝে হারিয়ে যেতো হাজারো পর্যটক, সেই স্বর্গরাজ্য হঠাৎ পরিণত হয়েছে এক আতঙ্কের উপত্যকায়। সম্প্রতি এখানে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হার২৬ জন নিরীহ মানুষ, আহত হয়েছেন ১৭ জ। এমন হামলা কেবল স্থানীয়দের নয়, গোটা ভারতের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছে উদ্বেগ, আতঙ্ক আর উত্তেজনা।
এক সন্ধ্যায় শান্তির পতন
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কিছুদিন আগেই ঘোষণা করেছিলেন, “কাশ্মীর এখন জঙ্গিমুক্ত।” সেই ঘোষণার রেশ কাটতে না কাটতেই পহেলগামে নামলো মৃত্যু ও বিভীষিকার ছায়া।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, যখন পাহাড়ি এলাকা ধীরে ধীরে ঢলে পড়ছিল রাতের নিস্তব্ধতায়, ঠিক তখনই আচমকা ভেসে আসে বন্দুকের গর্জন। চোখের পলকে পর্যটক বোঝাই একাধিক গাড়ির উপর গুলি চালায় সশস্ত্র হামলাকারীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, হামলাকারীরা পুরুষদের লক্ষ্য করেই গুলি চালিয়েছে। এক নারী পর্যটক কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, “ওরা আমার স্বামীকে মাথায় গুলি করেছে… আমি কেবল চেয়ে চেয়ে দেখেছি।”
২০১৯’র পুলওয়ামার স্মৃতি আবার ফিরে এলো
এই হামলার পরপরই মনে পড়ে যাপুলওয়ামা হামলা কথা, যেখানে প্রাণ হারিয়েছিলেন বহু জওয়ান। এবারও হামলার দায় স্বীকার করে‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ নামের একটি সংগঠন। তাদের দাবি, কাশ্মীরে বাইরে থেকে আসা প্রায় ৮৫ হাজা স্থায়ী বাসিন্দাই এই হামলার মূল কারণ।
ভারতীয় গোয়েন্দাদের অভিযোগ এবং প্রতিক্রিয়া
ভারতীয় গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছেন, এই হামলার পেছনে রয়েছে পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ মদদ। গোয়েন্দা সংস্থার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “এটা ভারতবিরোধী সন্ত্রাস, যার ছায়া রয়েছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মাথায়।”
প্রতিররাজনাথ সিং দিল্লি থেকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন—”এই বর্বরতার জবাব অবশ্যই দেওয়া হবে।”
কাশ্মীরের বর্তমান চিত্র
হামলার পর পহেলগামের বাতাস যেন ভারি হয়ে উঠেছে আতঙ্কে। দোকানপাট বন্ধ, স্কুলে তালা, রাস্তায় নেই সেই পরিচিত পর্যটকের ভিড়। শ্রীনগরের বিমানবন্দর পরিণত হয়েছে আতঙ্কিত পর্যটকের সমাগমস্থলে। কেউ ফিরছেন বিমানে, কেউবা গাড়িতে, সবার চোখে শুধুই শঙ্কা।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া
এদিকে পাকিস্তানও দিয়েছে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া। তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা ঘটনাটি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। পর্যটকদের মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক, আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।”
তবে আন্তর্জাতিক মহলের প্রশ্ন, এই হামলার পেছনে প্রকৃত দায় কার? ভারতের বক্তব্য অনুযায়ী এটি পাকিস্তান মদতপুষ্ট, অথচ পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করছে।
উপসংহার: নতুন করে কি ঘনিয়ে আসছে যুদ্ধ?
কাশ্মীর যেন এখন আর পর্যটনের স্বর্গরাজনৈতিক সংঘাতের বারুদের স্তূপ। রক্তাক্ত রাস্তা, আতঙ্কে দিশেহারা মানুষ আর উত্তপ্ত কূটনৈতিক বাকযুদ্ধ—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এখন উদ্বেগজনক।
এই ঘটনার পর অনেকেই আশঙ্কা করছেন, হয়তো আমরা দেখতে যাচ্ছি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের আরেকটি উত্তপ্ত পর্ব। প্রশ্ন উঠছে—এই হামলা ককাশ্মীরের শান্তির কফিনে শেষ পেরেক?