বৃহস্পতিবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৫| রাত ৩:৩৩

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ, গণপিটুনির পর পুলিশে হস্তান্তর

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ২৩, ২০২৫ ৯:০৪ অপরাহ্ণ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ, গণপিটুনির পর পুলিশে হস্তান্তর

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ, গণপিটুনির পর পুলিশে হস্তান্তর

ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের কর্মকর্তা মোজাম্মেল হককে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে স্থানীয় জনতা। ঘটনাটি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নের ধুলিয়া গ্রামে ঘটেছে। অভিযুক্ত মোজাম্মেল হক পুলিশের কাছে দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ায় এবং মৌখিক মুচলেকা দেওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

ঘটনার বিবরণ
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোজাম্মেল হক ধুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তিমূলক মন্তব্য করে আসছিলেন। সম্প্রতি গ্রামের চায়ের দোকান এবং জনসমাগমপূর্ণ স্থানে তিনি এ ধরনের আপত্তিকর মন্তব্য করেন, যা স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে।

গত সোমবার (২১ এপ্রিল) রাতে এই ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয় যুবকরা ক্ষুব্ধ হয়ে মোজাম্মেল হককে আটক করে এবং তাকে গণপিটুনি দেয়। পরে তারা পুলিশে খবর দিলে হরিণাকুণ্ডু থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা আক্তার হোসেন জানান, “মোজাম্মেল হক আগেও নবী-রাসূলদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় আগে এসব বিষয়ে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কিন্তু এবার তিনি প্রকাশ্যে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে ধরে মারধর করে এবং পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।”

পুলিশের বক্তব্য
হরিণাকুণ্ডু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এমএ রউফ খান ঢাকা পোস্টকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “এই ঘটনা কয়েক দিন আগের। সোমবার রাতে গ্রামবাসী মোজাম্মেল হককে মারধর করে পুলিশে খবর দেয়। আমরা তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তিনি আহলে কোরআন ওয়াল জামাত নামে একটি মতবাদে বিশ্বাসী এবং হাদিস মানেন না। এ নিয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল।”

ওসি আরও জানান, “গ্রামবাসী অভিযোগ করেছেন যে মোজাম্মেল হক নবী-রাসূলদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা তার এবং গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রাথমিকভাবে তিনি তার দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন এবং আর কখনো এ ধরনের কাজ করবেন না বলে মৌখিক মুচলেকা দিয়েছেন। এ কারণে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
তাহেরহুদা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য কাজী মোখলেসুর রহমান রাসু বলেন, “মোজাম্মেল হক আগেও নবী-রাসূলদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। সম্প্রতি তিনি আবার একই ধরনের কাজ করায় এলাকার যুবকরা তাকে ধরে মারধর করেছে। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হলে তিনি পুলিশের কাছে দোষ স্বীকার করে মাফ চেয়েছেন এবং মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন।”

স্থানীয়রা জানান, মোজাম্মেল হকের এ ধরনের মন্তব্যের কারণে গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল। তারা এই ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

অভিযুক্তের সঙ্গে যোগাযোগের প্রচেষ্টা
ঘটনা সম্পর্কে জানতে মোজাম্মেল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ধর্মীয় সংবেদনশীলতা ও গণপিটুনির ঘটনা
মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে এর আগেও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। গত বছর খুলনায় এক কিশোর এবং কুড়িগ্রামে এক যুবকের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগে গণপিটুনির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় স্থানীয় জনতার ক্ষোভ প্রকাশ পেলেও, বিচারবহির্ভূত শাস্তি এবং গণপিটুনির ঘটনা নিয়ে সমালোচনাও উঠেছে।

হরিণাকুণ্ডুর এই ঘটনায় পুলিশ জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে এবং গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা হয়েছে। তবে ধর্মীয় সংবেদনশীলতার বিষয়ে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ।

আইনি প্রক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
বর্তমানে এ ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের না হলেও, পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অপরাধে আইনের আওতায় আসতে পারেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ উঠায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

সমাজে ধর্মীয় সহনশীলতার প্রয়োজনীয়তা
মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে গণপিটুনির ঘটনা ধর্মীয় সংবেদনশীলতার বিষয়ে সমাজে সচেতনতার প্রয়োজনীয়তাকে সামনে এনেছে। ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং আইনের শাসন মেনে এ ধরনের ঘটনা সমাধানের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। গণপিটুনির মতো বিচারবহির্ভূত ঘটনা এড়াতে স্থানীয় প্রশাসন এবং সমাজের সচেতন মহলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এ ঘটনা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে আলোচনা চলছে, এবং অনেকে এটিকে একটি সতর্কতা হিসেবে দেখছেন। আগামী দিনে এ ধরনের ঘটনা রোধে সামাজিক সচেতনতা এবং আইনি প্রক্রিয়ার প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি