সোমবার, ২১শে এপ্রিল, ২০২৫| রাত ২:২২

আল-আকসা মসজিদ ভাঙার ষড়যন্ত্র, ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রীর পশ্চীম তীর সফরে বাধা ইসরায়েলের

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ২০, ২০২৫ ৬:৫১ অপরাহ্ণ
আল-আকসা মসজিদ ভাঙার ষড়যন্ত্র, ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রীর পশ্চীম তীর সফরে বাধা ইসরায়েলের

আল-আকসা মসজিদ ভাঙার ষড়যন্ত্র, ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রীর পশ্চীম তীর সফরে বাধা ইসরায়েলের

মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র স্থান আল-আকসা মসজিদ ভেঙে সেখানে ইহুদি মন্দির নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে ইসরায়েলি অবৈধ বসতিস্থাপনকারীদের উস্কানিমূলক আলোচনা ফিলিস্তিনে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এরই মধ্যে ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তাফাকে পশ্চিম তীরের কয়েকটি শহর ও গ্রাম সফরের অনুমতি না দিয়ে ইসরায়েল আরেকটি উদ্ধত পদক্ষেপ নিয়েছে। এই দুটি ঘটনা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ক্ষোভ আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে, যারা ইসরায়েলের এই ক্রমাগত উস্কানিকে শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে।
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র ও প্রবাসী মন্ত্রণালয় শনিবার (১৯ এপ্রিল) সতর্কতা জারি করে জানিয়েছে, ইসরায়েলি বসতিস্থাপনকারীরা হিব্রু ভাষার প্ল্যাটফর্মে আল-আকসা মসজিদ ভেঙে ‘থার্ড টেম্পল’ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছে। এই পরিকল্পনাকে ফিলিস্তিনি মন্ত্রণালয় জেরুজালেমে ইসলামি ও খ্রিস্টান পবিত্র স্থানগুলোতে ‘পদ্ধতিগত উস্কানি’ হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা এক্সে এক পোস্টে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আল-আকসা প্রাঙ্গনে জেরুজালেম স্ট্যাটাস কু অনুযায়ী অমুসলিমদের প্রার্থনা নিষিদ্ধ, কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরায়েলি বসতিস্থাপনকারীরা ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় সেখানে প্রবেশ করে প্রার্থনা করছে, যা উত্তেজনার অন্যতম কারণ।
এই ঘটনার পরপরই ইসরায়েল ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তাফার পশ্চিম তীরের বুরকা, দেইর দিবওয়ান, দোমা ও কুসরা গ্রাম এবং শহর সফরের অনুমতি প্রত্যাখ্যান করেছে। এই এলাকাগুলো গত কয়েক মাস ধরে অবৈধ বসতিস্থাপনকারীদের সহিংস হামলা ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর উপস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। ফিলিস্তিনের বসতি ও দেয়াল প্রতিরোধ কমিশনের প্রধান মুআয়্যাদ শাবান এই সিদ্ধান্তকে ‘বিপজ্জনক নজির’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি জানান, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের চলাচলের জন্য ইসরায়েলের সমন্বয় প্রয়োজন, কিন্তু এবার ইসরায়েল তা প্রত্যাখ্যান করেছে। শাবানের মতে, বসতিস্থাপনকারীদের উস্কানিমূলক প্রচারণা ও চাপের কাছে ইসরায়েল সরকার নতি স্বীকার করেছে।
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ দীর্ঘদিনের উত্তেজনার কারণ। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ এখানে প্রায় ৭,৭০,০০০ অবৈধ বসতিস্থাপনকারী বাস করছে, যারা ১৮০টি বৈধ ঘোষিত বসতি এবং ২৫৬টি অননুমোদিত আউটপোস্টে রয়েছে। এর মধ্যে ১৩৮টি কৃষি ও পশুপালন নির্ভর। এই বসতিস্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের ব্যক্তিগত ভূমি দখল করে এবং ইসরায়েলি সরকারের সুরক্ষা পায়। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে পশ্চিম তীরে সহিংসতা বেড়েছে। ফিলিস্তিনি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৮ মাসে এখানে ৯৫২ জন নিহত এবং ৭,০০০-এর বেশি আহত হয়েছেন।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে এবং সব বসতি প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়। কিন্তু ইসরায়েল এই রায় উপেক্ষা করে বসতি সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছে। আল-আকসা মসজিদ নিয়ে ষড়যন্ত্র এবং ফিলিস্তিনি নেতাদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার লঙ্ঘনের ধারাবাহিকতার অংশ। এই পদক্ষেপগুলো শুধু ফিলিস্তিনিদের জীবনকে আরও বিপন্ন করছে না, বরং আঞ্চলিক শান্তি প্রক্রিয়াকেও ধ্বংস করছে। ফিলিস্তিনি মন্ত্রণালয়ের আহ্বান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া এখন এই উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ইসরায়েলের এই উস্কানিগুলো অব্যাহত থাকলে ফিলিস্তিনে সহিংসতা আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা কেবল দুই পক্ষের মধ্যে বিভেদই বাড়াবে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি