সোমবার, ২১শে এপ্রিল, ২০২৫| রাত ২:৫২

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হাজারো জনতার বিক্ষোভ, কমছে জনপ্রিয়তা

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ২০, ২০২৫ ৬:২৭ অপরাহ্ণ
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হাজারো জনতার বিক্ষোভ, কমছে জনপ্রিয়তা

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হাজারো জনতার বিক্ষোভ, কমছে জনপ্রিয়তা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন। দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্যে একযোগে আয়োজিত এই বিক্ষোভে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক অভিবাসন নীতি এবং সরকারি ব্যয় কমানোর উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা করা হয়। বিক্ষোভকারীরা এই আন্দোলনকে “স্বাধীনতার জন্য নতুন লড়াই” হিসেবে অভিহিত করেছেন। এদিকে, সাম্প্রতিক জনমত জরিপে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

বিক্ষোভের বিস্তার ও প্রেক্ষাপট
শনিবার (১৯ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে হাজারো মানুষ ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নেন। এই আন্দোলনের নাম দেওয়া হয়েছে “৫০৫০১”, যার অর্থ ৫০টি অঙ্গরাজ্যে ৫০টি প্রতিবাদ, কিন্তু একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। এই বিক্ষোভ আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের ২৫০তম বার্ষিকীর সঙ্গে মিলিয়ে আয়োজিত হয়, যা বিক্ষোভকারীদের মধ্যে প্রতীকী তাৎপর্য বহন করে। অনেকে “নো কিংস” (কোনো রাজা নয়) লেখা পোস্টার হাতে বিক্ষোভে অংশ নেন, যা ইংরেজ রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে আমেরিকান বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে পরিচিত।

বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতি এবং সরকারি ব্যয় কমানোর উদ্যোগ। হোয়াইট হাউসের সামনে, বিভিন্ন শহরের কেন্দ্রস্থলে এবং এমনকি কিছু টেসলা শোরুমের সামনেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভকারীরা বিশেষ করে কিলমার আবরেগো গার্সিয়া নামে এক মার্কিন অভিবাসীর প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন, যিনি ভুলবশত এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয়েছেন।

বিক্ষোভকারী গিহাদ এলজেন্দি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে বলেন, “ট্রাম্প চাইলে এল সালভাদরের ওপর চাপ সৃষ্টি করে গার্সিয়াকে ফিরিয়ে আনতে পারতেন। তিনি তা না করে অভিবাসীদের প্রতি তাঁর নীতির কঠোরতা প্রকাশ করেছেন।”

ট্রাম্পের নীতির সমালোচনা
বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্প প্রশাসনের “ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডিওজিই)” নামক প্রকল্পেরও তীব্র সমালোচনা করেন। এই প্রকল্পের লক্ষ্য সরকারি ব্যয় এবং চাকরি কমানো, যা অনেকের কাছে গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা মনে করেন, এই উদ্যোগ সরকারি পরিষেবা এবং জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বেশিরভাগ বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হলেও, কিছু ক্ষেত্রে উত্তেজনা দেখা দেয়। একটি ঘটনায় ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান সুহাস সুব্রামানিয়াম একজন ট্রাম্প-সমর্থকের সঙ্গে তর্কে জড়ান, যার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

“স্বাধীনতার চেতনা”র পুনর্জাগরণ
বিক্ষোভকারীরা এই আন্দোলনকে “স্বাধীনতার চেতনা”র পুনর্জাগরণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ম্যাসাচুসেটসের লেক্সিংটন ও কনকর্ড যুদ্ধের স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিক্ষোভকারী টমাস ব্যাসফোর্ড বলেন, “এটি আমাদের স্বাধীনতার জন্য আরেকটি কঠিন সময়। আমি আমার নাতিদের শেখাতে চাই, এই দেশ কীভাবে গড়ে উঠেছে এবং কখনো কখনো স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে হয়।”

জনপ্রিয়তায় ধস
জনমত জরিপে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। গ্যালাপের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বর্তমানে ৪৫ শতাংশে নেমে এসেছে, যেখানে গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের সময় এটি ছিল ৪৭ শতাংশ। তুলনার জন্য, ১৯৫২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত যেকোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম কোয়ার্টারে গড় জনপ্রিয়তা ছিল ৬০ শতাংশ।

এছাড়া, ট্রাম্পের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা নিয়েও জনগণের সন্তুষ্টি কমছে। রয়টার্স/ইপসোসের একটি জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৩৭ শতাংশ আমেরিকান ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতি সমর্থন করছেন, যেখানে জানুয়ারিতে এই হার ছিল ৪২ শতাংশ।

তুলনামূলকভাবে ছোট বিক্ষোভ
যদিও শনিবারের বিক্ষোভটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল, তবে এটিকে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ বলা হচ্ছে না। চলতি এপ্রিলের শুরুতে “হ্যান্ডস অফ” নামে আরেকটি বৃহত্তর বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়, যা যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ১,২০০টি স্থানে ছড়িয়ে পড়েছিল। ট্রাম্পের পুনরায় ক্ষমতা গ্রহণের পর সেই বিক্ষোভকেই সবচেয়ে বড় বলে মনে করা হচ্ছে।

বিক্ষোভের তাৎপর্য
ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিভক্তি এবং জনগণের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের প্রতিফলন। অভিবাসন, সরকারি ব্যয় কমানো এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে জনগণের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। বিক্ষোভকারীরা এই আন্দোলনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং স্বাধীনতার পক্ষে তাদের অবস্থান জোরালোভাবে তুলে ধরছেন।

ট্রাম্পের প্রশাসন এই বিক্ষোভের প্রতি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে, জনপ্রিয়তার এই ধস এবং ক্রমবর্ধমান প্রতিবাদ তাঁর প্রশাসনের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। ভবিষ্যতে এই আন্দোলন কীভাবে বিবর্তিত হবে এবং ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে এর মোকাবিলা করবে, তা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সূত্র: বিবিসি, সিএনএন

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি