পুতিনকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার চিঠি – ট্রাম্পের হুমকির প্রেক্ষাপট
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি পাঠিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। চিঠিতে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান পারমাণবিক আলোচনা এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বোমা হামলার হুমকি। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এই বার্তা নিয়ে বৃহস্পতিবার মস্কো পৌঁছেছেন।
চিঠিতে খামেনি পুতিনকে অবহিত করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে ইরানকে কঠোর চাপের মুখে ফেলেছে। তেহরান যদি ওয়াশিংটনের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় না আসে, তাহলে ইরানের তেল কিনছে এমন তৃতীয় দেশগুলোর উপরেও শুল্ক আরোপ করবে বলে হুমকি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। একইসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র বাড়িয়েছে সামরিক শক্তি—নতুন করে মোতায়েন করেছে অতিরিক্ত যুদ্ধবিমান।
সম্প্রতি ওমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে একটি আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। উভয়পক্ষ আলোচনাটিকে ‘ইতিবাচক ও গঠনমূলক’ বলে উল্লেখ করেছে। আলোচনা আরও এগিয়ে নিতে আগামী শনিবার ইতালির রোমে বৈঠকে বসছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাকচি এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফ।
এই বৈঠকটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ ২০১৫ সালের বহুল আলোচিত পারমাণবিক চুক্তি ভেঙে পড়ার পর এটি হবে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের দ্বিতীয় দফার আলোচনার অংশ। এর আগে আরাকচি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার নিয়ে তারা কোনো আপোস করবেন না।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৮ সালে ক্ষমতায় এসে একতরফাভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে ২০১৫ সালের সেই চুক্তি থেকে বের করে আনেন। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে এসে ট্রাম্প এখন ইরানের সঙ্গে একটি নতুন চুক্তির চেষ্টা করছেন।
রাশিয়া, যেটি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন সদস্য এবং তেহরানের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র—তারা পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক বক্তব্যে আরাকচি বলেন, “আমরা চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে এই বিষয়ে সবসময় ঘনিষ্ঠভাবে পরামর্শ করে থাকি। বর্তমানে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার এটি একটি চমৎকার সুযোগ।”
এই প্রেক্ষাপটেই আরাকচি পুতিনের উদ্দেশ্যে খামেনির চিঠি বহন করছেন। চিঠিতে আঞ্চলিক এবং দ্বিপাক্ষিক নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও স্থান পেয়েছে বলে জানা গেছে। পুতিনের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ জানান, প্রেসিডেন্ট পুতিন ক্রেমলিনে আরাকচিকে স্বাগত জানাবেন।
পশ্চিমা দেশগুলোর অভিযোগ, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এমন মাত্রায় চালিয়ে যাচ্ছে, যা কেবল শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির সীমা ছাড়িয়ে গেছে এবং তা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উপযোগী পর্যায়ের কাছাকাছি। যদিও ইরান বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তাদের দাবি, তারা শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ বেসামরিক চাহিদা পূরণে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করতে চায়।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য ইরানের কাছ থেকে রাশিয়া অস্ত্র কিনেছে এবং চলতি বছরের শুরুতে দুই দেশ একটি ২০ বছর মেয়াদি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যদিও এই চুক্তিতে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কোনো শর্ত রাখা হয়নি।
রাশিয়া ও ইরান দীর্ঘদিন সিরিয়ায় একযোগে লড়াই করলেও গত ডিসেম্বরে তাদের মিত্র প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হন।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, খামেনির চিঠির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে ২০১৫ সালের সেই চুক্তি, যেটি থেকে যুক্তরাষ্ট্র ট্রাম্পের হাত ধরে একতরফাসূত্র: রয়টার্সভাবে সরে গিয়েছিল।