পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে ইউএনওর সামনে তিন কর্মচারীকে মারধর
জেলা প্রতিনিধি, দিনাজপুর | ১৫ এপ্রিল ২০২৫
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে পয়লা বৈশাখের উৎসবমুখর অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তিনজন কর্মচারীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে স্বেচ্ছাসেবক দলের বিরামপুর পৌরসভার সদস্য সচিব আরিফুর রহমান রাসেলের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
ঘটনাটি ঘটে সোমবার (১৪ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদের উন্মুক্ত মঞ্চে। আহতরা হলেন উপজেলা পরিষদের অফিস সহকারী এমদাদুল হক, আবু হোসেন এবং নাইট গার্ড মমিনুল ইসলাম ওরফে রনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, পয়লা বৈশাখ উদযাপনের অংশ হিসেবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য খাবার বিতরণের সময় সমস্যার সূত্রপাত হয়। খাবার বিতরণ নিয়ে উপজেলা পরিষদের কর্মচারীদের সঙ্গে আরিফুর রহমান রাসেল ও তার সহযোগীদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে রাসেল ও তার সঙ্গীরা তিন কর্মচারীর ওপর হামলা চালান।
আহত মমিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা অতিথিদের জন্য খাবার বিতরণের দায়িত্বে ছিলাম। হঠাৎ আরিফুর রহমান রাসেল এসে নিজের ইচ্ছামতো খাবার নিতে শুরু করেন। আমরা তাকে নিয়ম মেনে খাবার নিতে বলায় তিনি ক্ষিপ্ত হন। এরপর তিনি ও তার সহযোগীরা আমাদের ওপর হামলা করেন।”
ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুজহাত তাসনিম আউন, বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মিয়া শফিকুল আলম মামুন এবং সাধারণ সম্পাদক মনজুর ইলাহী চৌধুরী রুবেল। এই ঘটনায় উপস্থিত অনেকে হতবাক হয়ে পড়েন।
বিরামপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুবেল ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। তিনি বলেন, “আরিফুর রহমান রাসেল পৌর ইউনিটের সদস্য সচিব এবং তারা আমাদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। তবে এই ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা দলীয়ভাবে এ বিষয়ে আলোচনা করে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।”
অভিযুক্ত আরিফুর রহমান রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
ইউএনও নুজহাত তাসনিম আউন এই ঘটনাকে ‘দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “পয়লা বৈশাখের মতো একটি উৎসবমুখর আয়োজনে সবার সামনে এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা ভুক্তভোগীদের মামলা দায়ের করার পরামর্শ দিয়েছি। আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিরামপুর থানার ওসি মমতাজুল হক জানান, “আমরা এখনো এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এই ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। অনেকে বলছেন, উৎসবের মতো আনন্দময় পরিবেশে এ ধরনের সহিংসতা শুধু আয়োজনকেই ম্লান করে না, বরং সামাজিক সম্প্রীতির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তারা অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
পয়লা বৈশাখের এই ঘটনা বিরামপুরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা আশা করছেন, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।